স্বামীকে নিয়ে বাধ্য হয়ে নিজের ভিটে ছেড়েছিলেন পূর্ণিমা এবং সনাতন দুর্লভ। তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার অনলাইনে। —প্রতীকী চিত্র।
প্রতিবেশীর জ্বর না সারায় দায়ী করা হয়েছিল এক সন্তানহারা মাকে। সালিশি সভায় ডাইনি অপবাদ দিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। স্বামীকে নিয়ে বাধ্য হয়ে নিজের ভিটে ছেড়েছিলেন পূর্ণিমা এবং সনাতন দুর্লভ। তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার অনলাইনে। এর পরই হুগলির দাদপুরের চক কৃষ্ণপুর গ্রামে গেলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। ঘরছাড়া দম্পতিকে অবিলম্বে গ্রামে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে খবর।
মঙ্গলবার পোলবা-দাদপুর বিডিও মৈত্রী ভৌমিক, সিআই ধনিয়াখালি দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য, দাদপুর থানার ওসি প্রশান্ত ঘোষ এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা ওই গ্রামে যান। তখন দাদপুরের চক কৃষ্ণপুর গ্রামের মাতব্বরদের অবশ্য দেখা পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের লোকজন গ্রামের মহিলাদের বোঝান, ‘ডাইনি’ বলে কিছু হয় না। এ সব কুসংস্কারে বিশ্বাস করলে এক দিন হয়তো পূর্ণিমার মতো অবস্থা হতে পারে। এ সব শুনে কেউ কেউ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আধিকারিকরা গ্রামবাসীদের বলেন, ‘‘কাউকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এটা হতে পারে না। আর অসুখ হলে ডাক্তার দেখাতে হবে। ওঝা নয়।’’
প্রশাসনের কাছে দোলন দুর্লভ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘সবাই বলল, ডাইনি। আমারা তো দেখিনি। এখন সবার সঙ্গে থাকতে গেলে বলতে হবে। কিন্তু যারা ও সব বলেছিল, তারা কেউই এখন নেই।’’
দাদপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গৌড়চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের মধ্যে কুসংস্কার কী করে ভর করল, আমরা জানি না। তবে কুসংস্কার দূর করতে আমরা সব রকম চেষ্টা করব। আজ (মঙ্গলবার) প্রশাসনের আধিকারিক গ্রামে এসেছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীদের থেকে কোনও রকম সহযোগিতা পাইনি। আমরা চাইছি, আলোচনার মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে বোঝাতে। তাতে কাজ না হলে আইন আইনের পথে চলবে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বুধবার গ্রামে গিয়ে মানুষকে বোঝানো হবে। বিজ্ঞান মঞ্চকে সঙ্গে নিয়ে কুসংস্কার দূর করতে সচেতন করা হবে। গ্রামছাড়া হওয়া প্রৌঢ় দম্পতিকে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।
অন্য দিকে, বাড়িছাড়া হয়ে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েও ঠাঁই হয়নি। বাধ্য হয়ে চুঁচুড়া রেল স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পূর্ণিমা জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে শুধু চা-বিস্কুট খেয়ে দিন কাটছে তাঁদের। বাড়িতে যেতে পারছেন না ভয়ে। জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি ফিরতে চেয়ে দাদপুর পঞ্চায়েত এবং থানায় আবেদন করেছেন দম্পতি। কিন্তু তাঁরা গ্রামে ফিরলে আবার আক্রমণ হতে পারে, এই আশঙ্কায় নাকি ঝুঁকি নিতে চাইছে না প্রশাসন। গত কয়েক দিন ধরে সফিউল ইসলাম নামে দাদপুরের এক শিক্ষকের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ওই দম্পতি।