Mousam Chatterjee

মৌসমের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত চাইল পরিবার, হাই কোর্টের নির্দেশে দেহের ময়নাতদন্ত এনআরএসে

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বৃহস্পতিবার শুধু ময়নাতদন্তের নির্দেশই দেননি। গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফির নির্দেশও দিয়েছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:০২
HC orders autopsy in Mausam Chatterjee death case, Whole process to be videographed

—প্রতীকী ছবি।

সংশোধনাগারে হেফাজতে থাকাকালীন ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। দেহ সংরক্ষণ করে ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছিল আড়িয়াদহের মৌসম চট্টোপাধ্যায়ের পরিবার। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সেই ময়নাতদন্ত হল। প্রসঙ্গত, মৌসমের পরিবার তাঁর মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের আর্জিও জানিয়েছে হাই কোর্টে।

Advertisement

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বৃহস্পতিবার শুধু ময়নাতদন্তের নির্দেশই দেননি। গোটা প্রক্রিয়ার ভিডিয়োগ্রাফির নির্দেশও দিয়েছিলেন। যেখানে গত কয়েক দিন মৌসমের দেহ সংরক্ষিত ছিল, সেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অবশ্য ময়নাতদন্ত হয়নি। বিচারপতি ঘোষের নির্দেশে এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ‘বিশেষ চিকিৎসক দল’ গড়ে দেন। একজন এগজ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নজরদারিতে এনআরএসেই ময়নাতদন্ত হয়।

গত ১৩ জানুয়ারি রাতে দমদম সংশোধনাগারের হাসপাতাল থেকে মৌসমকে আরজি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসকরা মৌসমকে মৃত ঘোষণা করেন। ১৪ জানুয়ারি সকালে দক্ষিণেশ্বর থানা মৌসমের বাড়িতে তাঁর মৃত্যুসংবাদ জানায়। সে দিনই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে মৌসমের পরিবার তাঁর দেহের ময়নাতদন্তের আর্জি জানায়। সেই আর্জির প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট দেহ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিল। আরজি করের মর্গেই রাখা হয়েছিল মৌসমের দেহ। বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে আরজি কর থেকে মৃতদেহ এনআরএসে পাঠানো হয়। দেহ স্থানান্তরিত হয় টালা থানার ওসির তত্ত্বাবধানে। সন্ধ্যার পর ময়নাতদন্ত শুরু হয় বলে মৌসমের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।

মৌসুমের পরিবারের তরফে জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তার’ অভিযোগ করা হয়েছে। পরিবারের আইনজীবী ময়ূখ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘মৌসমকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেছিল। জেল হেফাজতে অসুস্থ মৌসমকে ইচ্ছাকৃত পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।’’ মৌসমের মা মুক্তা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, মৌসমকে ১৩ জানুয়ারি রাতে জেল থেকে বার করার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হোক। মৌসম জেলে থাকাকালীনই মারা গিয়েছিল নাকি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা গিয়েছিল, ওই ফুটেজ দেখলে তা বোঝা যেত। কিন্তু তেমন কোনও নির্দেশ আসেনি।’’ আদালতের কাছে সিবিআই তদন্তের আর্জিও তাঁরা জানিয়েছেন। আগামী ২৪ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

আড়িয়াদহ তথা দক্ষিণেশ্বর থানা এলাকায় প্রোমোটিং এবং জমি ব্যবসায় ‘সিন্ডিকেট রাজ’-এর অভিযোগ অনেক দিনের। স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, বছর খানেক আগে পর্যন্তও ওই এলাকায় সেই ব্যবসার অন্যতম পরিচিত নাম ছিলেন মৌসম। ২০২০ সাল থেকে তিনি বরাহনগর পুরসভায় সুপারভাইজ়ার পদে চাকরিও করছিলেন। পরিবারের দাবি, চাকরি পাওয়ার পর থেকে ইমারতি দ্রব্যের কারবারের সঙ্গে মৌসমের আর কোনও যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু এলাকার আর এক ‘সিন্ডিকেট-খ্যাত’ নেতা জয়ন্ত সিংহ ওরফে ‘জায়ান্ট’-এর সঙ্গে মৌসমের ‘বিবাদ’ সুবিদিত ছিল।

প্রসঙ্গত, আড়িয়াদহের একটি ক্লাবে ‘দরবার’ বসিয়ে ‘অভিযুক্ত’-দের প্রায় মধ্যযুগীয় কায়দায় শাস্তি দেওয়ার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসায় জয়ন্তকে নিয়ে হইচই শুরু হয়। জয়ন্ত এলাকায় শাসকদলের ছত্রছায়ায় ছিলেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। এখনও তিনি জেলে বন্দি রয়েছেন। ১৩ জানুয়ারি রাত পর্যন্তও মৌসমও জেলবন্দিই ছিলেন। ওই দিনই শেষ বার সংশোধনাগারে গিয়ে ছেলেকে দেখে এসেছিলেন মা মুক্তা। তাঁর কাছে মৌসমের অভিযোগ ছিল, তাঁর কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না। মায়ের বয়ান সে রকমই। দেখে আসার পর দিন সকালেই ছেলের মৃত্যুসংবাদ পান মুক্তা।

Advertisement
আরও পড়ুন