(বাঁ দিকে) বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
রাজ্যের ছ’টি বিধানসভার উপনির্বাচনে সব ক’টিতেই জয় পেয়েছে শাসকদল তৃণমূল। শনিবার ভোটের ফলঘোষণার পরই তৈরি হয়েছে জল্পনা। আবারও শপথগ্রহণকে কেন্দ্র করে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে শুরু হবে দ্বন্দ্ব? দিনভর আলোচনায় মশগুল রইল রাজনৈতিক থেকে প্রশাসনিক মহলের একাংশ। গত কয়েকটি উপনির্বাচনের ‘ধারা’ মেনে দ্বন্দ্ব শুরু হলে নবান্ন যে স্পিকারের পাশে থাকবে, রাজনৈতিক মহলের তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। শনিবার রাজভবনের তরফে অবশ্য এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
অতীত অভিজ্ঞতার নিরিখে বোসের সঙ্গে বিমানের স্নায়ুযুদ্ধ আবারও অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ, রাজভবনের সঙ্গে বিধানসভা এবং নবান্নের দূরত্ব কমার কোনও লক্ষণ নেই। এমতাবস্থায় শপথ নিয়ে যে আবারও রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়বে, তা ধরেই নিচ্ছে প্রশাসনিক মহলের একাংশ।
পরিষদীয় রীতি অনুযায়ী জয়ী প্রার্থীর তথ্য নির্বাচন কমিশন বিধানসভাকে জানিয়ে দেয়। সঙ্গে রাজ্যের পরিষদীয় দফতর রাজভবনকে চিঠি দিয়ে বিধায়কদের শপথগ্রহণের আয়োজনের উল্লেখ করে। গত ছ’মাসে ছয় তৃণমূল বিধায়ক উপনির্বাচনে জয়ী হলেও, তাঁদের শপথগ্রহণে রাজ্যপালের কোনও ভূমিকা ছিল না বলেই অভিযোগ প্রধান বিরোধী দল বিজেপির। ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। তৃণমূল সূত্রে খবর, অধিবেশন চলাকালীন নবনির্বাচিত বিধায়কেরা স্পিকারের কাছে এসে শপথ নিতে পারেন। তাই মনে করা হচ্ছে, তৃণমূলের ছ’জন বিধায়ক আগামী সপ্তাহে শুরু হওয়া শীতকালীন অধিবেশনেই বিধায়ক পদে শপথ নেবেন।
কিন্তু রাজভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিধায়ককে শপথগ্রহণ করানোর অধিকার রাজ্যপাল নিজের মনোনীত ব্যক্তিকে দেন। যাঁকে রাজ্যপাল দায়িত্ব দেন, সেই ব্যক্তিই বিধায়কদের শপথগ্রহণ করান। তা অমান্য করা হলে, অধিবেশনে যোগ দিলে সংশ্লিষ্ট বিধায়ককে প্রতি দিন ৫০০ টাকা করে জরিমানা দিতে হয়।
শনিবার রাজভবনে আগমনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করেন রাজ্যপাল। বিধায়কদের শপথগ্রহণ নিয়ে রাজভবনের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। রবিবার সব সরকারি দফতর ছুটি। তাই এ সংক্রান্ত বিষয়ে সোমবারের আগে কিছু জানার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, ওই দিন থেকেই শুরু হচ্ছে বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। সূত্রের খবর, তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব চান, নবনির্বাচিত বিধায়কেরা স্পিকারের কাছেই শপথ নিন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরে আরও ছয় বিধায়কের শপথ নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়েছে বিধানসভা-রাজভবনের মধ্যে। ৪ জুন বরাহনগরে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভগবানগোলা থেকে জয় পান রেয়াত হোসেন সরকার। সেই সময় রাজ্যপাল বোস তাদের পৃথক ভাবে রাজভবনে শপথগ্রহণের জন্য ডেকেছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তারা রাজভবনে না গিয়ে বিধানসভায় স্পিকারের কাছে শপথগ্রহণ করার দাবিতে ধর্নায় বসেন। কিন্তু রাজ্যপাল সেই ধর্নায় সাড়া দেননি। ইতিমধ্যে বিধানসভার দু’দিনের অধিবেশন ডাকা হয়। তার মাঝে রাজ্যপাল শপথগ্রহণের দায়িত্ব দেন ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান। আবার অগস্ট মাসে মানিকতলা, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ এবং রায়গঞ্জের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হলে সে ক্ষেত্রেও স্পিকারের সঙ্গে রাজভবনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। সে বার বিধানসভার বাদল অধিবেশনে চার বিধায়ককে শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার। শনিবার রাজ্যে উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশ হতেই একই প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করেছে রাজনৈতিক থেকে প্রশাসনিক মহলে। নবনির্বাচিত ছয় বিধায়কের শপথ নিয়েও কি জলঘোলা হবে? উত্তর দেবে সময়।