(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম পছন্দ মেনেই রাজ্যের আরও চার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এর আগে ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছিলেন তিনি। এ বার কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে তপতী চক্রবর্তী, মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে জানে আলম, মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌরাংশু মুখোপাধ্যায় এবং হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য পদে নন্দিনী সাহুকে নিয়োগ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার এই চার জনকে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তার পরেই তাঁদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন তিনি।
রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে জট তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত নামেই সায় দিয়েছেন রাজ্যপাল। প্রথম পর্যায়ে রাজ্যের ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্যের নামের তালিকা প্রকাশ্যে এসেছে। রাজভবন সূত্রে খবর, ৩৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাজ্যপাল ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। ৬ ডিসেম্বর, প্রথম পর্যায়ে প্রেসিডেন্সি, বর্ধমান, বাঁকুড়া, কল্যাণী, সিধু-কানহো-বিরসা এবং রানি রাসমণি গ্রিন বিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্যের নাম প্রকাশ্যে এসেছে। প্রেসিডেন্সির উপাচার্য করা হয় নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তীকে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান শঙ্করকুমার নাথ। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপকুমার বর্মণ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে কল্লোল পাল, সিধু-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্রকুমার চক্রবর্তী এবং রানি রাসমণি গ্রিন বিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয় অমিয়কুমার পণ্ডাকে।
সোমবার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বিষয়েও দু’জনের মধ্যে কথা হয়। তার পরেই মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো তালিকা থেকে চার জনের নাম বেছে রাজ্যের চার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ করা হয়েছে।
রাজ্যের ৩৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে নবান্ন এবং রাজভবনের মধ্যে সংঘাত চরমে উঠেছিল। সেই সংঘাতের জেরে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্থায়ী উপাচার্য পদ ফাঁকা। আচার্য তথা রাজ্যপালের ঠিক করে দেওয়া অস্থায়ী উপাচার্যেরাই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। প্রথমে হাইকোর্ট এবং পরে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়। গত ৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বে ‘সার্চ-কাম-সিলেকশন’ কমিটি তৈরি করে দেয়। শীর্ষ আদালত বলেছিল, এই কমিটি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের জন্য তিনটি নাম বাছাই করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাবে। মুখ্যমন্ত্রী তিন জনের মধ্যে পছন্দের ভিত্তিতে একটি তালিকা তৈরি করবেন। সেই নামের তালিকা থেকেই এক জনকে বেছে নেবেন রাজ্যপাল। তবে তা নিয়ে শীর্য আদালতে আপত্তি তোলেন বোস। সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে জানায়, রাজ্যপালের আর্জি খারিজ করা হচ্ছে না। পরে প্রয়োজন মতো তা শোনা হবে। আপাতত আগের নির্দেশ মেনেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চলুক।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করে রাজ্য সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। চলতি বছরের ২৬ জুলাই থেকে ২৩ অগস্ট পর্যন্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করেছে উচ্চশিক্ষা দফতর। তার পর দু’দফায় চলে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া। সেখান থেকেই উপাচার্য পদপ্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। সেই তালিকা থেকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তিন জনের নাম বেছে রাজভবনকে পাঠায় নবান্ন। এ বার সেখান থেকেই দু’দফায় মোট ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল।