(বাঁ দিক থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত শাহ, সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
সোমবার রাতে দিল্লিতে এসে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাঁর অফিসে যান তিনি। সেখানেই প্রায় এক ঘণ্টা ছিলেন বোস। বেলা ১২টা নাগাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও মন্তব্য করেননি রাজ্যপাল। সোমবার বিকেলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ইস্যু নিয়ে বৈঠক হয় রাজ্যপালের। তার পরেই সন্ধ্যার বিমানে তিনি রওনা দেন রাজধানীর উদ্দেশে। আর পর দিন সকালেই শাহের দফতরে তাঁর সাক্ষাৎপর্ব নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।
মনে করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে তৃণমূল প্রতিনিধি দলের দাবিদাওয়া নিয়েই রাজ্যপাল কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। তবে জাতীয় রাজনীতির কারবারিদের একাংশের কথায়, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব রাজ্যপালকে যে অভিযোগ করেছেন, তার সুরাহা করতে পারবেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ বিষয়টি তাঁর মন্ত্রকের অধীনে নয়। এ ক্ষেত্রে সমস্যা মেটাতে হলে রাজ্যপাল সরাসরি কথা বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিংবা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এবং গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহর সঙ্গে। কিন্তু রাজ্যপাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করাতেই নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
সোমবার বিকেল ৪টেয় রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে রাজ্যপালের আশ্বাসে ধর্না অবস্থান তুলে নিয়েছে তৃণমূল। তবে ধর্না কর্মসূচি তোলার আগে অভিষেক বলেন, ‘‘রাজ্যপাল কথা দিয়েছেন, দু’সপ্তাহ নয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আমি যত দূর শুনেছি, ইতিমধ্যে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তিনি। আশা করছি, এর বিহিত উনি করবেন।’’ সঙ্গে জানিয়ে দেন, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কেন্দ্রের ‘সদুত্তর’ না পেলে ১ নভেম্বর থেকে ফের কর্মসূচি শুরু হবে। তিনি বলেন, ‘‘১ নভেম্বর যখন রাস্তায় নামব, অভিষেকের নেতৃত্বে নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। ৫০ হাজার মানুষ হাঁটবেন, সামনে মমতা।’’
বাংলার রাজনীতির কারবারিদের মতে, যে হেতু তৃণমূল নেতৃত্ব দাবিপূরণের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, তাই রাজ্যপালকে এ ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়তি উদ্যোগ দেখাতেই হত। তাই দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন তিনি। সেই পর্যায়েই আনন্দ বোস কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। আগামী কয়েক দিনে হয়তো পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং তৃণমূল নেতৃত্বের দাবিদাওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মন্ত্রীদের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে বোসের।
তবে রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা জনিত বিষয় নিয়েও রাজ্যপাল-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাক্ষাৎ হতেই পারে। কারণ, সব রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার বিষয় দেখার দায়িত্ব থাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। আর রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালকে নিয়োগ করলেও, তাঁকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই রাজ্যে কাজকর্ম করতে হয়। এ ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতেই পারে।