(বাঁ দিকে) বাঘের পায়ের ছাপ। (ডান দিকে) খাঁচা পাতছেন বনকর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।
পায়ের ছাপ দেখে বনকর্মীদের অনুমান পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে ঢুকেছে বাঘ। তাকে বন্দি করতে বুধবার সকাল থেকে তোড়জোড় শুরু করল বন দফতর। রাইকা পাহাড় সংলগ্ন জঙ্গলে পাতা হল খাঁচা। বাঘের ‘সম্ভাব্য গতিপথে’ বসানো হয়েছে ট্র্যাপ ক্যামেরা। পাহাড় এলাকার আশপাশেও বনকর্মীদের তৎপরতা বেড়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে পাশের ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়া জেলার বন দফতরও। শোনা যাচ্ছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লকের গঙ্গামান্না ও গুঁইয়াপাড়া এলাকায় জঙ্গলে চরতে যাওয়া একাধিক ছাগল গুরুতর আহত হয়েছে। তাই বাঘের আতঙ্ক আরও বেড়েছে বান্দোয়ান ব্লকের রাইকা পাহাড় সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায়।
নতুন বছর শুরুর আগে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া ঘুরে বাঁকুড়ায় প্রবেশ করেছিল ওড়িশার সিমলিপালে থাকা বাঘিনি ‘জ়িনত’। বাঁকুড়ার গোঁসাইডিহি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে ঢোকার পরে গত ২৯ ডিসেম্বর বন দফতরের ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয় বাঘিনি। আলিপুর চিড়িয়াখানা হয়ে তাকে আবার ফেরানো হয়েছে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ৩ দিন ধরে আবার বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে বাংলার জঙ্গলমহলে। বাঘ সম্পর্কে বন দফতর নিশ্চিত ভাবে কিছু না জানালেও রবিবার রাত থেকে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির জঙ্গলে ‘বাঘ দেখা গেছে’ বলে দাবি করতে থাকেন স্থানীয়েরা। সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয় বন দফতর।
মঙ্গলবার পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লকের রাইকা পাহাড় সংলগ্ন নেকড়া গ্রাম লাগোয়া বেলডুংরি পাহাড়তলিতে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে। তা দেখে স্থানীয়েরা দাবি করতে থাকেন বেলপাহাড়ির জঙ্গল থেকে বাঘটি আশ্রয় নিয়েছে পুরুলিয়ার রাইকা পাহাড়ে। বন দফতর মনে করছে, জ়িনতের পিছু পিছু বাঘটি ওড়িশা থেকে বাংলায় ঢুকেছে। বাঘ ধরতে রাইকায় পৌঁছে গিয়েছে সুন্দরবনের একটি বিশেষজ্ঞ দল। বাঘটিকে খাঁচাবন্দি করার জন্য পাতা হয় বেশ কয়েক’টি খাঁচা। টোপ হিসাবে ছাগল দেওয়া হয়। বাঘের সম্ভাব্য গতিপথ চিহ্নিত করে সেই রাস্তায় মোট ২০টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। তা ছাড়া, নেকড়া গ্রাম সংলগ্ন বেলডুংরি পাহাড়ের দিক জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতভর জেনারেটর চালিয়ে পাহাড়তলির বিভিন্ন এলাকা আলোকিত করা হয়েছিল। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে মাইকিং করে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। বন দফতরের পরামর্শ, রাতের অন্ধকারে কেউ যেন বাড়ির বাইরে একা না বেরোন।