জেল থেকে বেরোলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —নিজস্ব চিত্র।
জেল থেকে ছাড়া পেলেন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)। বুধবারই রেশন দুর্নীতি মামলায় তাঁকে জামিন দিয়েছে কলকাতার বিচারভবন। এর পর সন্ধ্যায় জেল থেকে ছাড়া পেলেন তিনি।
আদালত জামিন দেওয়ার পরেই প্রেসিডেন্সি জেলে ভিড় জমিয়েছিলেন বালুর অনুগামী। পৌঁছে গিয়েছিলেন বালুর মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিক। এর পর বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ জেল থেকে বেরোন প্রাক্তন মন্ত্রী। বেরোনোর পর অবশ্য জেলের বাইরে বেশি ক্ষণ দাঁড়াননি তিনি। জেল থেকে বেরিয়েই গাড়িতে উঠে চলে গিয়েছেন মেয়ের সঙ্গে। গিয়েছেন সল্টলেকের বাড়িতে। বাড়িতে ঢোকার সময়েও কোনও কথা বলেননি বালু। প্রসঙ্গত, সূত্রের খবর, আদালতেরই নির্দেশ রয়েছে, রেশন দুর্নীতি মামলা সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারবেন না প্রাক্তন মন্ত্রী।
এর আগে জামিনের শুনানিতে প্রাক্তন মন্ত্রীকে দুর্নীতির ‘রিং মাস্টার’ বলে বর্ণনা করেছিল ইডি। ইডি দাবি করেছিল, জ্যোতিপ্রিয় ‘দুর্নীতির গঙ্গাসাগর’। নদীর শাখা-প্রশাখা যেমন সাগরে মেশে, তেমনই দুর্নীতিকারীদের গন্তব্যস্থল ছিলেন তিনি। রেশন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বালুর জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে ইডির বক্তব্য ছিল, রেশন দুর্নীতির এফআইআরে প্রথমে তাঁর নাম ছিল না। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে একাধিক নথি ইডির হাতে এসেছে। তা থেকে দেখা গিয়েছে, এফআইআরে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর নাম না থাকলেও এই দুর্নীতির ‘রিং মাস্টার’ তিনিই।
রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করেছিল ইডি। গ্রেফতারির পরে প্রথমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী। হাসপাতালে কিছু দিন থাকতে হয় তাঁকে। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে জেলে যান তিনি। সেই থেকে জেলেই ছিলেন। বেশ কয়েক বার আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী। কিন্তু প্রতি বার ‘প্রভাবশালী তত্ত্ব’ তুলে ধরে তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেছিল ইডি। তাদের দাবি ছিল, জ্যোতিপ্রিয়কে জামিন দিলে তিনি তদন্তে প্রভাব খাটাতে পারেন। অতঃপর জামিন পাননি প্রাক্তন মন্ত্রী। বুধবার অবশ্য তা ঘটেনি।
দুর্গাপুজোর আবহে বাড়িতে ম্যারাথন তল্লাশির পর রাতে বালুকে গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পরেই গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, মন্ত্রীর বাড়ি থেকে রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র মিলেছে। জেলবন্দির পর অসুস্থতার কারণে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন। তবে পরে সুস্থ হয়ে ফের জেলে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতারের পর বার বার তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়েছিলেন, বিজেপি ‘ষড়যন্ত্র’ করেই বনমন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে। অথচ ২০২২ সালের ২৩ জুলাই তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে তাঁকে মন্ত্রিত্ব ও দলের মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থকে সাসপেন্ডও করা হয়েছিল। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত পার্থ এখনও জামিন পাননি। সদ্যই তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে। কিন্তু জামিন পেলেন বালু।