রেশন দোকানে কমছে গমের বরাদ্দ। ফাইল চিত্র।
খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে গমের বদলে চাল বরাদ্দ নিয়েও এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতে বাড়ছে রাজ্যের। খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে আগামী জুন মাস থেকে রাজ্যের প্রায় সাড়ে তিন কোটি রেশন গ্রাহকের গম পাবেন না। গমের বদলে ওই গ্রাহকদের চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য খাদ্য দফতর এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও, এর কার্যকরিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। প্রথমত, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের প্রায় আড়াই কোটি গ্রাহক এতদিন মাসে মাথাপিছু দু’কেজি করে চাল ও তিন কেজি করে গম পেতেন। এই প্রকল্পেরই আওতায় আরও প্রায় ৯০ লক্ষ গ্রাহক পেতেন মাথাপিছু এক কেজি করে চাল ও গম। নতুন ব্যবস্থায় আগামী কয়েকমাস দুই শ্রেণির গ্রাহকরা যথাক্রমে শুধু মাথাপিছু মোট পাঁচ কেজি ও মোট দু’কেজি করে চাল পাবেন।
কিন্তু নতুন এই নিয়মের অতিরিক্ত চালের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে রাজ্যকেই। আর এখানেই শুরু হয়েছে সঙ্ঘাত। একের গমের পরিমাণ কমেছে, তার ওপর বাড়তি চালের বোঝা। রাজ্যের বক্তব্য, বাড়তি চাল যোগাতে হবে কেন্দ্রকেই। গ্রাহকদের জন্য যে অতিরিক্ত চাল প্রয়োজন হবে, তা এফসিআই-কে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এই অতিরিক্ত চাল সরবরাহ করার দায়িত্ব খাদ্য দফতর কোনওভাবেই নেবে না।
রাজ্য সরকারের বিরোধের আরও একটি কারণ হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের খাদ্যভাস বদল। কেন্দ্রীয় সরকারের আচমকা এই সিদ্ধান্তের ফলে আটার দাম বাড়ার আশঙ্কা করছে খাদ্য দফতর। খাদ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, গম সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় অসুবিধায় পড়বেন গ্রাহকরা। কারণ বাংলার মানুষের খাদ্যাভাস পাল্টে গিয়েছে। এতদিন ওপেন সেল স্কিমে ময়দা কলগুলি এফসিআই-এর কাছ থেকে গম কিনত। নতুন নিয়মে তা বন্ধ হলে খোলাবাজারে আটা ও ময়দান দাম বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
খাদ্য দফতরের এই আশঙ্কার সঙ্গে সুর মিলিয়ে রেশন ডিলারদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অনেক বছর আগেই খাদ্যভাস পরিবর্তন করেছেন। বেশির ভাগ মানুষ দুপুরে ভাত খান। সকালে এবং রাতে রুটি খেতেই অভ্যস্ত। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের যে গমের বরাদ্দ কমিয়ে চাল বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াবে। তাই রাজ্য সরকারের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই। যাতে গমের যে বরাদ্দ ছিল সেই বরাদ্দ যেন বজায় থাকে।’’