তৃণমূল নেতা আবুল নাসার খুন হয়েছেন না আত্মহত্যা করেছেন? পুলিশের জেরায় কী বললেন ধৃত বান্ধবী? গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
তাঁর ‘মামু’র সঙ্গে তৃণমূল নেতা আবুল নাসারের ‘দ্বন্দ্ব’ ছিল। খুনের কথা স্বীকার না-করলেও পুলিশকে এই তথ্য দিয়েছেন মন্দারমণিকাণ্ডে ধৃত যুবতী। মন্দারমণির হোটেলে তৃণমূল নেতার রহস্যমৃত্যুর ৭২ ঘণ্টা পর ধৃত দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করেছে পুলিশ। তাতেই বিভিন্ন তথ্য মিলছে বলে তদন্তকারীদের একাংশের সূত্রে খবর।
শনিবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার তৃণমূল নেতা আবুলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় মন্দারমণির একটি হোটেলে। দেহ উদ্ধারের পরে মন্দারমণি কোস্টাল থানার হাতে গ্রেফতার হন আবুলের এক ব্যবসায়ী বন্ধু এবং এক বান্ধবী। তাঁরাও উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। শুক্রবার একই সঙ্গে মন্দারমণির একটি হোটেলে উঠেছিলেন তাঁরা। ওই দলেই ছিলেন চতুর্থ জন। তিনি এক মহিলা। ওই মহিলা অবশ্য মন্দারমণি এসেও কোনও কারণে ফিরে যান। অন্য দিকে, মৃত আবুলের স্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনারই আদাহাটা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুরাইয়া পরভিনের দাবি, তাঁর স্বামীকে মন্দারমণি ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। খুনের নেপথ্যে ব্যবসায়িক কারণের কথা বলেন তিনি। এ-ও জানান, ধৃত যুবতীর মামা তাঁর স্বামীর খুনের ‘মূল চক্রী’। সোমবার তিনি দাবি করেছেন, ‘‘ওই যুবতীকে ব্যবহার করে আমার স্বামীকে খুন করা হয়েছে। ধৃত যুবক এবং যুবতীর মামাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমি প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত যুবতীকে জেরা করে তাঁর ‘মামু’র সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। তবে তৃণমূল নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ধৃত যুবক পুলিশের বেশির ভাগ প্রশ্নের জবাবে ‘জানি না’ বলেছেন বলেই তদন্তকারীদের ওই সূত্রের দাবি।
তৃণমূল নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলায় রবিবার তাঁর বান্ধবী এবং বন্ধুকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে কাঁথি আদালত। সোমবার দু’দফায় ধৃত যুবক-যুবতীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথম দফায় আলাদা করে এবং পরে দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত যুবক তদন্তকারীদের একাধিক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেও প্রায় প্রতিটি প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন যুবতী। যদিও প্রথম দিকে তাঁর বেশির ভাগ জবাব ‘বিভ্রান্তিমূলক’ ছিল বলেই তদন্তকারীদের ওই অংশের দাবি। তবে সময় যত গড়িয়েছে, পুলিশের প্রশ্নের পর প্রশ্নের মুখে পড়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন অভিযুক্ত যুবতী। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাঁর মামার সঙ্গে আবুলের বিবাদের কথা জানিয়েছেন ধৃত। কিন্তু আবুলের আত্মহত্যার ‘তত্ত্বে’ তিনি এখনও অনড়।
মন্দারমণিকাণ্ডের তদন্ত সম্পর্কে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সোমবার সকালে দু’জনকে এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তবে দু’জনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় বেশ কিছু অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে।’’ তিনি জানান, এখনও তিন দিন হেফাজতে পাওয়া যাবে দু’জনকে। তার মধ্যে তৃণমূল নেতার কী ভাবে এবং কী কারণে মৃত্যু হয়েছে, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে তাঁরা আশাবাদী। পাশাপাশি, দ্বিতীয় যে মহিলা তৃণমূল নেতার সঙ্গে মন্দারমণি এসেও ফিরে যান, তাঁর সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এখনও তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি নয় পুলিশ। এখন ধৃত যুবতীর মামা (তিনিও তৃণমূলের এক নেতা বলে খবর) কোথায় আছেন, তা নিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জায়গায় তাঁর খোঁজে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
অন্য দিকে, তৃণমূল নেতার মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন আমডাঙার তৃণমূল বিধায়ক রফিকুল রহমান। তিনি বলেন, ‘‘এটা পরিকল্পিত ভাবে খুন বলেই মনে হচ্ছে। সেই সম্ভাবনাই প্রবল। গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করুক পুলিশ। কোনও অভিযুক্ত যেন বাদ না যান।’’ কিন্তু তদন্তপ্রক্রিয়া কত দূর এগিয়েছে, কী তথ্য পেয়েছে পুলিশ— এ সব নিয়ে জানতে চাওয়া হলে পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) শুভেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে। হেফাজতে নিয়ে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এক জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’’