RG Kar Case Verdict

সাজায় হতাশ নির্ভয়ার মা-বাবা

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন নির্ভয়া। তাঁর মা-বাবা বর্তমানে গিয়েছেন প্রয়াগরাজে, মহাকুম্ভ দর্শনে। আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে মকর সংক্রান্তিতে পুণ্যস্নান এবং সাধুসন্তদের আশীর্বাদ পেতে গত কয়েক দিন ধরেই রয়েছেন সেখানে।

Advertisement
স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৪১

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

“দুর্ভাগ্য আমাদের এই দেশে জন্মেছি। এ দেশে কোনও দিন বিচার মেলে না।” আর জি কর-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়কে সোমবার দুপুরে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা শুনিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। তার কিছু ক্ষণ পরে ফোনে সেই খবর পেয়ে এমনই হতাশাজনক মন্তব্য করলেন দিল্লি গণধর্ষণ-কাণ্ডে নিহত নির্ভয়ার বাবা। সন্ধ্যায় তাঁর মা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, “বিরলতম ঘটনা যখন নয় বলছে, তা হলে তো ছেড়ে দিলেই পারত! এই সাজার তো কোনও মানে নেই!”

Advertisement

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লির চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন নির্ভয়া। তাঁর মা-বাবা বর্তমানে গিয়েছেন প্রয়াগরাজে, মহাকুম্ভ দর্শনে। আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে মকর সংক্রান্তিতে পুণ্যস্নান এবং সাধুসন্তদের আশীর্বাদ পেতে গত কয়েক দিন ধরেই রয়েছেন সেখানে। তবে ঠান্ডায় কিছুটা কাবু হয়ে বৃদ্ধ ওই দম্পতি। এ দিন দুপুরে ফোনে যখন তাঁদের ধরা গেল, কুম্ভের মেলায় ঘুরছিলেন তাঁরা। জানানো হল, ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা নয়’ বলেই জানিয়ে যাবজ্জীবনের সাজা শুনিয়েছেন বিচারক। যা শুনে রাগত কণ্ঠে নির্ভয়ার মা বললেন, “ওই মেয়েটির সঙ্গে চরম বর্বরতা করা হয়েছিল। তার চোখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছিল। এটা বিরলতম ঘটনা নয়? তা হলে বিরলতম ঘটনা কাকে বলে? আদালতে এই ঘটনাকে বিরল বলে প্রতিষ্ঠা করতে না পারাটাও তো পুলিশ এবং সিবিআইয়ের চরম ব্যর্থতা বলে মনে করি। তবে সেটা রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা নাকি সাফল্য— কী বলব বুঝতে পারছি না।”

এ প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে এক হাত নিতে ছাড়লেন না নির্ভয়ার মা। চাঁছাছোলা ভাষায় জানালেন, এই ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা থেকে হাসপাতালে হামলা— সব খবরই রেখেছেন তাঁরা। আর তাতে আসল ‘দোষী’কে আড়াল করতেই যে এত আয়োজন, তা বুঝতেও তাঁদের বাকি নেই।

দিল্লি গণধর্ষণ-কাণ্ডের ১২ বছর পরে আজও দেশের মেয়েরা নিরাপদে নেই— এই চিন্তা স্বস্তি দেয় না দিল্লিবাসী এই দম্পতিকে। মেয়েকে অকালে হারিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবিতে বছরের পর বছর আদালতের চক্কর কাটতে হয়েছিল তাঁদের। অবশেষে সাত বছর পরে দোষীদের ফাঁসির সাজা কার্যকর হলেও ছাড়া পেয়ে যায় অন্যতম নাবালক অভিযুক্ত। তাই ‘বিচার’ পেলেও দেশের বিচারব্যবস্থার উপর থেকে যেন আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। নির্ভয়ার মা বলছেন, “হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট অন্তত এই যাবজ্জীবন সাজাটাই রেখে দেবে বলে আশা করি। কিন্তু বিশ্বাস নেই। এই ঘটনায় যে পরিমাণ রাজনীতি হয়েছে! তথ্যপ্রমাণ তো সব লোপাটই করে দিয়েছে। শুধু এক জনের কাজ তো এটা নয়। অথচ আজও পুলিশ বা সিবিআই, কেউই বাকিদের ধরতে পারল না।”

সঞ্জয়কে ফাঁসির সাজা না দেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা আর ক্ষোভ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন নির্ভয়ার বাবা। বলছেন, “ফাঁসির সাজা দিলে হয়তো কিছুটা শান্তি হত। এখনও হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের রাস্তা খোলা থাকছে। আসলে এ দেশে বড় বড় প্রভাবশালী লোকেরাই সরকারকে নাচায়। তাই মানুষ ন্যায়বিচার পায় না।”

গত অগস্টে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই ঘটনার পরে ফোনে ওই চিকিৎসক-পড়ুয়ার মা-বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল নির্ভয়ার বাবা-মায়ের। গত বছর ১৬ ডিসেম্বরের দিল্লির অনুষ্ঠানে তাঁদের যোগ দিতেও বলেছিলেন। তবে কোনও কারণে তাঁরা সেখানে আসতে পারেননি। তবে মানসিক ভাবে সবসময়েই তাঁদের পাশে রয়েছেন এই দম্পতি। এ দিন আদালতের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও নির্যাতিতার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নে অবশ্য সহমত পোষণ করছেন নির্ভয়ার মা। বললেন, “মেয়ে তো আর ফিরবে না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে ক্ষতিপূরণের টাকাটা ওঁদের নেওয়া উচিত। মামলা লড়তে গেলেও তো টাকা লাগবে!”

Advertisement
আরও পড়ুন