(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, অধীর চৌধুরী। —ফাইল ছবি।
ধর্ষণের অপরাধ রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদিচ্ছা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। একই সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদে যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে (প্রাইভেট মেম্বার বিল) যে বিল আনার কথা বলেছেন, তা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন তিনি। বুধবার মহাজাতি সদনে আয়োজিত ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সেখানেই চাঁছাছোলা ভাষায় মমতা-অভিষেককে আক্রমণ করেন তিনি।
অধীর বলেন, ‘‘খোকাবাবু মঞ্চ থেকে দাঁড়িয়ে বলছে, উনি পার্লামেন্টে প্রাইভেট মেম্বার বিল আনবেন। কিসের জন্য? ধর্ষণ করলে যাতে ফাঁসি হয় তার জন্য। আর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আমি বিল নিয়ে আসছি, যাতে ফাঁসির ব্যবস্থা করা যায়। এর আগেও খোকাবাবু বলেছিল, যে দিন ঘটনা ঘটে গুলি করে এনকাউন্টার কিংবা ফাঁসি দিয়ে দাও ১০ দিনের মধ্যে। দিদি দিনটা বাড়িয়ে ৫০ দিন করেছেন।’’ সংবিধানের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি বলছি, ভারতের যে সংবিধান তার ২৪৫ আর্টিকল এবং সপ্তম অনুচ্ছেদে ক্রিমিন্যাল ল’ অর্থাৎ ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে আইন আনার ক্ষেত্রে রাজ্যের হাতে কিছু অধিকার দেওয়া আছে। যাতে তারা আইন করতে পারে। যেমন মোপোকা হয়েছে মহারাষ্ট্রে। তার জন্য পার্লামেন্টে বা দিল্লিতে আন্দোলন দরকার হয় না।’’
রাজ্য সরকার ও শাসকদলের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অধীর বলেন, ‘‘ধর্ষণ করলে এনকাউন্টার করে দাও। ধর্ষণ করলে ফাঁসি দিয়ে দাও। এনকাউন্টারের তত্ত্ব উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথকে বলতে শুনেছি। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে বলতে শুনেছি। আর এখানকার খোকাবাবুকে বলতে শুনলাম। বড় অদ্ভুত মিল লাগছে।’’
তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ভারতে যে আইন আছে, সেই আইনে কাউকে ফাঁসি দেওয়াই যায়। নির্ভয়াকাণ্ডে কি চার জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়নি? আমি যদি করব মনে করি, আইনে তো ফাঁসির ব্যবস্থা আছে। এই কলকাতার বুকেই তো ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ফাঁসি দেওয়ার জন্য ফাঁসির মতো করে তদন্ত করতে হবে। দিদি সেখানে চালাকি করছেন। ফাঁসি দেওয়ার জন্য প্রমাণ চাই। কিন্তু প্রমাণ লোপাটের জন্য পুলিশ চাই। প্রমাণ লোপাটের জন্য হাসপাতালের আধিকারিকদের চাই। প্রমাণ লোপাটের জন্য আরজি কর হাসপাতাল ভাঙচূর চাই। সমস্ত প্রমাণ লোপাট করে দাও। সমস্ত তথ্য মুছে দাও। মুখে বলব, ফাঁসি দেব। তাই আইন তৈরি করলেই হবে না, আইনকে যথাযথ ব্যবহারে ব্যবস্থা করতে হবে। এটা করবেন না আপনি। তাই তো এত দিন পর মনে পড়ছে যে ফাঁসি চাই।’’
প্রসঙ্গত, ধর্ষণের ঘটনায় রাশ টানতে ফাঁসির আইন আনতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাই আগামী সপ্তাহে দু’দিনের বিশেষ অধিবেশন বসিয়ে বিধানসভা আইন তৈরি করবে তাঁর সরকার। সেই আইন তৈরি ও তার প্রয়োগ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে কার্যত মমতার উদ্যোগের সদিচ্ছাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ।