প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে এখনও রাইল্স টিউবের মাধ্যমেই খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। আগের চেয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থারও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে তিনি এখনও পুরোপুরি বিপন্মুক্ত নন। তাঁকে সর্ব ক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুদ্ধদেব এখন সম্পূর্ণ সচেতন। চিকিৎসক এবং ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথাও বলছেন। শরীরে নানা রকম নলের উপস্থিতি নিয়ে তিনি বিরক্তিও প্রকাশ করছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বেশি দিন হাসপাতালে থাকতে চাইছেন না। চিকিৎসকদের কাছে তিনি একাধিক বার বাড়ি যেতে চেয়েছেন। এমনকি, রাইল্স টিউব সরিয়ে নিজের মুখে খেতেও চেয়েছেন বুদ্ধদেব। যদিও চিকিৎসকেরা এখনই রাইল্স টিউব সরিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী নন। তাঁদের মতে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এখনও নিজের মুখে খাওয়ার উপযোগী হননি। তবে তাঁকে রাইল্স টিউব ছাড়া খাওয়ানো যায় কি না, খাবার তিনি গলাধঃকরণ করতে পারবেন কি না, পরীক্ষা করে তা দেখা হচ্ছে। চলছে ‘সোয়ালো অ্যাসেসমেন্ট’।
বুধবার সকালেই বুদ্ধদেবের এক চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, তিনি আম খেতে চেয়েছেন। তবে এখনও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ‘স্পিচ অ্যান্ড সোয়ালো রিহ্যাবিলিটেশন থেরাপিস্ট’ তাঁকে সকালেই দেখে গিয়েছেন। খাবার খেলে তাঁর বিষম লাগতে পারে কি না, তা দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমের নরম অংশ বুদ্ধদেবকে খাওয়ানো যায় কি না, তা-ও দেখছেন চিকিৎসকেরা। বুধবার সন্ধ্যায় বুদ্ধদেবের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যে বুলেটিন হাসপাতালের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, তাঁর ফিজিওথেরাপি চলছে। রক্তের প্যারামিটার আপাতত স্বাভাবিক। যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি তিনি খাচ্ছেন, সেগুলি আগামী শনিবার পর্যন্ত চালু রাখার পরিকল্পনা রয়েছে চিকিৎসকদের। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, এখন ‘ফিজিয়োথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন’ চলবে। যা শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসের কার্যকারিতাই বৃদ্ধি করবে না, চলনশক্তি ফিরে পেতেও সাহায্য করবে। বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরে ফিজিওথেরাপি চালু রাখতে হবে বুদ্ধদেবকে।
আপাতত বুদ্ধদেবের শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল। তবে বাইপ্যাপ সাপোর্ট পুরোপুরি সরিয়ে দিতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। মাঝেমধ্যেই তাঁকে বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখতে হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, টানা চার ঘণ্টা বাইপ্যাপ সাপোর্টে রেখে তার পর এক ঘণ্টা বিশ্রাম দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। কারণ, এক টানা অনেক ক্ষণ বাইপ্যাপ সাপোর্টে থাকতে আপত্তি করছেন বুদ্ধদেব নিজেই। আপাতত তাঁকে ইন্টারমিটেন্ট নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরি সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
শনিবার ফুসফুস এবং শ্বাসনালীতে সংক্রমণ নিয়ে বুদ্ধদেবকে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। আগে থেকেই তাঁর সিওপিডির সমস্যা রয়েছে। বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বরেও ভুগছিলেন। শনিবার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বুদ্ধদেবকে। নিউমোনিয়া ধরা পড়ে তাঁর। চিকিৎসকেরা জানান, সংক্রমণ অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার রাতেই তাঁকে ‘ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে’ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কালে অবস্থার খানিক উন্নতি হলে ভেন্টিলেশন থেকে বার করা হয়।
‘আমাকে ছেড়ে দিন’
একটু সুস্থ হতেই বুদ্ধদেব চিকিৎসকদের কাছে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। শরীরে একগুচ্ছ নল নিয়ে হাসপাতালে তিনি একেবারেই থাকতে চান না। হাসপাতাল সূত্রে খবর, তিনি বার বার চিকিৎসকদের বলছেন, ‘‘আমাকে এ বার ছেড়ে দিন।’’ ঘনিষ্ঠজনেদেরও একই কথা বলছেন তিনি। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন না চিকিৎসকেরা।
খেতে চান আম
বুদ্ধদেবকে এখনও রাইল্স টিউবের মাধ্যমে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ, খাবার সরাসরি তাঁর পেটে পৌঁছে যাচ্ছে নলের মাধ্যমে। একটু সুস্থ হতেই এই প্রক্রিয়ায় ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি আম খাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। যদিও এখনই তা সম্ভব নয়। রাইল্স টিউব সরিয়ে নিলে তিনি নিজের মুখে খেতে পারবেন কি না, গলাধঃকরণ করতে কোনও সমস্যা হবে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আমের নরম অংশ তাঁকে দেওয়া যায় কি না, দেখা হচ্ছে তা-ও।
নল না-পসন্দ!
নলের মাধ্যমে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। রাইল্স টিউব ছাড়াও শরীরে একাধিক নলের উপস্থিতি। এত নল সহ্য করতে পারছেন না বুদ্ধদেব। তিনি ঘনিষ্ঠমহলে এবং চিকিৎসকদের কাছে নল খুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। দ্রুত বাড়ি গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে চান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
চলছে বাইপ্যাপ
মাঝে মাঝেই বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখতে হচ্ছে বুদ্ধদেবকে। পুরোপুরি বাইপ্যাপ সরিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বুদ্ধদেবকে টানা চার ঘণ্টা বাইপ্যাপ সাপোর্টে রেখে তার পর এক ঘণ্টা বিশ্রাম দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ, এক টানা অনেক ক্ষণ বাইপ্যাপ সাপোর্টে থাকতেও আপত্তি জানিয়েছেন তিনি।
চিন্তা ‘সেকেন্ডারি ইনফেকশন’
শারীরিক পরিস্থিতি আপাতত স্থিতিশীল হলেও চিকিৎসকদের চিন্তায় রেখেছে ‘সেকেন্ডারি ইনফেকশন’। এটাই এখন তাঁদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই সংক্রমণ ঠেকানো গেলেই যুদ্ধে অনেক দূর এগোনো যাবে।
মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকে সূর্যকান্তও
বুধবার বুদ্ধদেবের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকে হাজির ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র। বৈঠক শেষে বুদ্ধদেবের বিছানার পাশে চলে যান তিনি। সেখানে সাত-আট মিনিট সময়ও কাটান। তবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে কি না, জানা যায়নি।