ED Attacked in Sandeshkhali

অরাজকতার সাক্ষী আগেও হন রাজকুমার! বাংলায় মার খাওয়া ইডি কর্তা হেনস্থার মুখে পড়েছেন অন্য রাজ্যে

দায়িত্ববান অফিসার হিসাবে সুনাম রয়েছে রাজকুমারের। তাঁর ব্যাচমেট এবং সহকর্মীদের কথায়, এর আগেও তিনি ‘পলিটিক্যাল কেস’ সামলেছেন। তাই এই ঘটনায় তিনি ভেঙে পড়ার মতো মানুষ নন বলেই সহকর্মীদের মত।

Advertisement
সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:২৭
ED officer who got attacked by mob in Sandeshkhali, harassed before also

আক্রান্ত ইডি আধিকারিক রাজকুমার রাম। —ফাইল চিত্র ।

গিয়েছিলেন সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে। তল্লাশি তো চালাতে পারেনইনি, বরং স্থানীয় বাসিন্দা এবং শাহজাহান অনুগামীদের কাছে ব্যাপক মারধর খেতে হয়েছে তাঁকে এবং তাঁর সহকর্মীদের। মাথাও ফেটেছে। তবে এই প্রথম নয়। মারমুখী জনতার রোষে পড়ে আহত সেই ইডি কর্তা রাজকুমার রাম এর আগেও তল্লাশি অভিযানে গিয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এমনটাই জানা গিয়েছে ইডি সূত্রে।

Advertisement

রাজকুমার ২০১১ ব্যাচের অফিসার। বাড়ি বিহারে। বর্তমানে সহকারী ডিরেক্টর হিসাবে গুয়াহাটিতে কর্মরত। আগে ছিলেন বেঙ্গালুরুতে। ইডি সূত্রে খবর, বছরখানেক আগে দক্ষিণ ভারতের এক মন্ত্রীর সঙ্গে যোগ থাকা কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল রাজকুমারকে। হেনস্থার শিকারও হতে হয়। যেমনটা শুক্রবার সন্দেশখালির অভিযানে গিয়ে হতে হল। তবে এর আগে কখনও মাথা ফাটেনি রাজকুমারের।

দায়িত্ববান অফিসার হিসাবে সুনাম রয়েছে রাজকুমারের। তাঁর ব্যাচমেট এবং সহকর্মীদের কথায়, এর আগেও তিনি ‘পলিটিক্যাল কেস’ সামলেছেন। ভাল ভাবেই সামলেছেন। তাই এই সব ঘটনায় তিনি ভেঙে পড়ার মতো মানুষ না বলেই তাঁর সহকর্মীদের মত। রাজকুমারের এক ব্যাচমেট বলেন, ‘‘ভিডিয়ো দেখেছি। রাজকুমারের মাথা দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছিল। তবে ভিডিয়োতে ওর চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, ও ভেঙে পড়েনি। এর আগেও রাজনৈতিক মামলা ভাল ভাবে সামলেছে। ভেঙে পড়ার মতো লোক ও নয়।’’

শুক্রবার সকালে সন্দেশখালিতে অভিযানে গিয়েছিলেন রাজকুমার। তার আগের দিন রাতে, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে তিনি গুয়াহাটি থেকে কলকাতায় আসেন। এর পর ভোরবেলা সহকর্মীদের সঙ্গে তৃণমূল নেতার বাড়িতে অভিযান দিতে সন্দেশখালির উদ্দেশে রওনা দেন।

ইডির কথায়, শাহজাহানের বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। অনেক ক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করে কারও সাড়া পাওয়া যায়নি। অথচ সেই সময় শাহজাহানের মোবাইলের অবস্থান পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি নিজের বাড়িতেই রয়েছেন। এর পর কিছুটা নিরুপায় হয়েই কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে শাহজাহানের বাড়ির দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন রাজকুমাররা। কিন্তু ঠিক সেই সময়েই তাঁরা আবিষ্কার করেন প্রায় ৮০০-১০০০ সশস্ত্র গ্রামবাসী ঘিরে ধরেছে তাঁদের। এঁদের কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে পাথর কারও হাতে ইট। সে সব নিয়েই ঘটনাস্থলেই ইডির উপর চড়াও হন তাঁরা। জনরোষের মুখে পড়তে হয় রাজকুমারদের। ইট-পাটকেল, লাঠিৃসোঁটা নিয়ে তাঁদের দিকে তেড়ে আসেন স্থানীয় এবং তৃণমূল নেতা শাহজাহানের অনুগামীরা। তাঁদের মারের চোটে মাথা ফেটেছে রাজকুমারের। তাঁর আরও দুই সহকর্মী তথা ইডি আধিকারিক গুরুতর চোট পেয়েছেন। তাঁরা তিন জনেই এখন সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।

ইডি তাদের প্রেস বিবৃতিতে স্পষ্ট করেছে, এই হামলায় তৃণমূল নেতা শাহজাহান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরাই উস্কানি দিয়েছেন বলে সন্দেহ তাঁদের। একই সঙ্গে ইডি এ-ও জানিয়েছে যে, গ্রামবাসীদের ভিড় এতটাই হিংস্র ছিল যে, তাঁদের দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা রাজকুমারদের প্রাণেও মারতে পারেন। প্রাণে বাঁচাতেই নিজেদের কর্তব্য অসম্পূর্ণ রেখে ওই এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন রাজকুমার এবং তাঁর সহকর্মীরা।

পরে রাজকুমার-সহ তিন জন আহত ইডি আধিকারিককে সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজকুমারের মাথায় পাঁচ-ছ’টি সেলাই পড়েছে। স্ক্যান করানো হয়েছে। তিনি এখন হাসপাতালের এইচডিইউ বিভাগে ভর্তি। বাকি দুই ইডি আধিকারিক অঙ্কুর এবং সোমনাথ দত্তের মাথাতেও সেলাই পড়েছে। তাঁরাও ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে।

Advertisement
আরও পড়ুন