সল্টলেকের এফডি ব্লকের পুজো উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।
দিন দশেক আগে সল্টলেকের এফডি ব্লকের পুজো উদ্বোধনে এসে জঞ্জালের গাড়ির দুর্গন্ধে বিরক্ত হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল, ‘‘কী গন্ধ! বাপরে বাপ!’’ কয়েক দিনের মধ্যে সেই পুজোই রাজ্য সরকারের বিশ্ব বাংলা সম্মানে সেরা পরিবেশবান্ধব পুরস্কার পেল।
২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর পুজো পরিক্রমা করে বিভিন্ন পুজোকে বিশ্ববাংলা সম্মান দেয় রাজ্য। বিভিন্ন বিভাগে সেই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন— সেরার সেরা, সেরা ভাবনা, বিশেষ পুরস্কার। এ বছর সেরা পরিবেশবান্ধব নামে আরও একটি বিভাগ যোগ করা হয়েছে। ষষ্ঠীর বিকেলে প্রকাশিত সেই তালিকা ঘোষণা হতেই দেখা গেল, শীর্ষে রয়েছে এফডি ব্লক। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এ বছর থেকেই সেরা পরিবেশবান্ধব পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়েছে। আর প্রথম বছরেই আমরা বাজিমাত করলাম। খুবই ভাল লাগছে। এই পুজোর সঙ্গে যাঁরা যাঁরা যুক্ত, এই সম্মান তাঁদের মনোবল আরও বাড়াবে।’’
বিধাননগরের নামকরা কয়েকটি পুজোর মধ্যে এফডি ব্লকের পুজো অন্যতম। প্রতি বছরেই এই পুজোর মণ্ডপসজ্জা থেকে প্রতিমা, সবেতেই চমক থাকে। এ বছর পুজোর মণ্ডপ ভাবনায় আমেরিকার আদিম উপজাতির শাপমোচনের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। তা দেখতে পঞ্চমী-ষষ্ঠী-সপ্তমীতে দর্শনার্থীদের ঢল চোখে পড়ার মতো। মৌপিয়া ভট্টাচার্য নামে এক দর্শনার্থী বললেন, ‘‘এফডি-র পুজো দেখার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। প্রতি বছরই সপরিবার আসি এখানে। এ বারও ভীষণ ভাল করেছে। মাঠের ভিতরটা খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। জায়গায় জায়গায় ময়লা ফেলার বাক্স রয়েছে। ব্যবস্থাপনা খুবই ভাল।’’
তবে পুজো উদ্বোধনের দিন উদ্যোক্তা এবং পুরসভার আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল বলেই মনে করছেন দেবাশিস চৌধুরী নামে আর এক দর্শনার্থী। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করতে আসছেন যখন, তখন আরও বেশি করে সচেতন হওয়া উচিত ছিল। এফডি মাঠের পাশেই তো পুরসভার দফতর। আর ঠিক উল্টো দিকের জমিতে ময়লার গাড়ি থাকে। ওই দিন মণ্ডপের গেটের কাছে ভ্যাটের গাড়িটা কেন রাখা হল বা কারা রাখল, আমি সেটাই ভাবছি। তবে এটা ভাল ব্যাপার যে, দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং শেষমেশ সেরার সম্মানটাও এরাই পেল।’’
বিধাননগর পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বাণীব্রত অবশ্য ওই ঘটনা নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাইলেন না। তিনি শুধু বলেন, ‘‘ওই ঘটনাটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। ওটা বিতর্কিত বিষয়। বিধাননগর পুরসভা আরও সচেতন হয়েছে। ম্যাডাম (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) গন্ধ পেয়েছেন মানে নিশ্চয়ই একটা গাফিলতি ছিল। কিন্তু আমরা দ্রুত পদক্ষেপ করেছি।’’
বিধাননগরের মেয়র হিসাবে ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘মাঠে ঢোকার গেটের কাছে একটা মিষ্টির দোকান রয়েছে। হয়তো সেখান থেকে কিছু বর্জ্য ফেলা হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি। ওই ঘটনার দায় সম্পূর্ণ আমার। এই পুজো সেরা পরিবেশবান্ধব পুরস্কার পাওয়ায় আমি সত্যিই ভীষণ খুশি।
গত ২২ সেপ্টেম্বর এফডি ব্লকের পুজো উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে মণ্ডপ চত্বরে যাওয়ার সময় গেট দিয়ে ঢোকার মুখেই ঈষৎ থমকে যান। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘একটা ভ্যাটের গাড়ি দাঁড় করানো রয়েছে। কী গন্ধ!’’ মমতার এই কথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে পড়ে যান তাঁর সঙ্গে থাকা মেয়র কৃষ্ণা, চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত, বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু ও সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। মণ্ডপে ঢোকার আগে এক বার দাঁড়িয়েও পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, কৃষ্ণাকে কার্যত বকুনি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা কেন হবে?’’ তার কিছু পরেই পুজো উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে সুজিতকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওখানে ভ্যাটের গাড়িটা কেন দাঁড় করানো রয়েছে। কালকেই তো সরাতে বলে গেলাম।’’
সেই পুজোর সেরা পরিবেশবান্ধবের সম্মান পাওয়া কার্যত অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে পুজো উদ্যোক্তাদের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, ওই ঘটনায় পুজো কমিটির সেই অর্থে কোনও দোষ ছিল না। ভ্যাটের গাড়িটি পুরসভার। সম্ভবত সাফাইকর্মীদের ভুলের কারণেই ওই ঘটনা ঘটেছিল। যা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। পুজো কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বকা দেওয়া পর তৎক্ষণাৎ ভ্যাটের গাড়িটা ওখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটা পরিষ্কার করে ফেলা হয়। কিন্তু মাঠের ভিতর (যেখানে মূল মণ্ডপ) কোথাও কোনও নোংরা ছিল না। আমরা শুরু থেকেই এ ব্যাপারে ভীষণ সতর্ক ছিলাম।’’
কৃষ্ণাও বলেন, ‘‘পুজো উদ্যোক্তারা খুব ভাল কাজ করেছেন। ভিতরে একটা বাগান তৈরি করা হয়েছে। মেদিনীপুরের শিল্পীরা এসে কাজ করেছেন। মাঠের ভিতরে কোথাও প্লাস্টিকের লেশমাত্র নেই। উদ্যোক্তারা যোগ্য সম্মান পেয়েছেন।’’