(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। ডেরেক ও’ব্রায়েন (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
মাত্র ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো। সেটাই টুইট করে তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন অভিযোগ করলেন, বাংলার পঞ্চায়েত ভোটে হিংসার নেপথ্যে রয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই ভিডিয়োতে শুভেন্দুকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পথই পথ দেখাবে। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, ৩৫৫ (ধারা) লাগবেই।’’ যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শুভেন্দুর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তাঁর দলের নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ওই ভিডিয়োর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তৃণমূল যে ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে, সেখানে শুভেন্দুকে একটি বেসরকারি চ্যানেলে মন্তব্য করতে শোনা যাচ্ছে। তিনি বলছেন, ‘‘পথই পথ দেখাবে। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, ৩৫৫ (ধারা) লাগবেই। এ ছাড়া কোনও পরিত্রাণ পশ্চিমবাংলার নেই। অনেক জিনিস করাতে হয়। কী করে করাতে হয় আমি জানি।’’ এই ভিডিয়োকেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অস্ত্র করেছে তৃণমূল। রাজনীতির বৃত্তে ঘোরাফেরা করাদের অনেকের মতে, তৃণমূল দেখাতে চাইছে, শুভেন্দুরাও বুঝে গিয়েছেন রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি লড়াই করতে পারবে না। তাই কেন্দ্রীয় নজরদারির কথা বলা হচ্ছে। অন্য একটা অংশের মত, জনমানসে তৃণমূল এই ধারণাও তৈরি করতে চাইছে, অশান্তির পরিবেশ আসলে তৈরি করছে বিজেপি-সহ বিরোধীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলতেই এই ছক কষা হয়েছে। শাসক দলের নেতাদেরও বক্তব্য, বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে এ রাজ্যে হিংসা, অশান্তির পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে।
#EXPOSED
— Derek O'Brien | ডেরেক ও'ব্রায়েন (@derekobrienmp) July 13, 2023
EXPLOSIVE VIDEO REVEALS WHO WAS BEHIND VIOLENCE IN BENGAL RURAL POLLS@SuvenduWB BJP Leader of the Opposition in Bengal on camera!
"We have to create an atmosphere where Article 355 (emergency provisions) will have to be implemented. I know how to get all this done." pic.twitter.com/vWuiwu2SUj
যদিও ৩৫৫ বা ৩৫৬ ধারা জারি করার ‘হুঁশিয়ারি’ বিজেপির তরফে এই প্রথম দেওয়া হল তা নয়। অতীতেও একাধিক নেতা, একাধিক বার এ কথা বলেছেন। শোনা যায়, ওই অংশটিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সতর্কও করেছেন। মুকুল রায় যখন পুরোদমে বিজেপি করছিলেন, সেই সময়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘৩৫৫ বা ৩৫৬ জারি করে আমরা মমতাকে রাজনৈতিক ভাবে শহিদ করব না। রাজনৈতিক ভাবেই লড়ব।’’ কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপির বঙ্গজয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয়। তার পর থেকে শুভেন্দুর রাজনীতির কৌশল নিয়ে বিজেপির মধ্যেও মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। শুভেন্দু চান, রাজভবনের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে। দলের অন্য অংশ, বিশেষ করে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বা তাঁর অনুগামীরা সেটা চান না। অন্য দিকে, শুভেন্দু যে ভাবে আদালত নির্ভরতা দেখাচ্ছেন, তাতেও খুশ নয় রাজ্য বিজেপির একটা বড় অংশ। ওই অংশের মত খানিকটা মুকুলের সেই সময়ের বক্তব্যকেই সমর্থন করে। তাঁদের বক্তব্য, রাজনৈতিক লড়াই মাঠে ময়দানেই করতে হবে। রাজভবন বা কোর্টে দৌড়ে ওটা করা যায় না। উচিতও নয়।
শুভেন্দু যদিও এ সব বক্তব্যকে যে খুব একটা গুরুত্ব দেন, তা নয়। অন্তত তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সে কথা বলে না। তবে শুভেন্দুর এই ভিডিয়োকে তৃণমূল যখন রাজনৈতিক ভাবে হাতিয়ার করতে চাইছে, তখন নিশীথ কিছুটা এড়িয়ে যাওয়ার সুরে বললেন, ‘‘তৃণমূলের তরফে কী টুইট করা হয়েছে তা জানি না। তাতে কী ভিডিয়ো রয়েছে তার সত্যতা যাচাই করা হয়েছে কি না তা-ও জানা নেই। তাই এই বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’