হাজরা মোড় থেকে শুরু হল ডিএ আন্দোলনকারীদের মিছিল। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে দিয়ে পেরিয়ে গেল ডিএ আন্দোলনকারীদের মিছিল। বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবিতে শনিবার কলকাতায় মিছিল সরকারি কর্মীদের একাংশের। দক্ষিণ কলকাতার হরিশ মুখার্জি রোড দিয়ে মিছিল এগোচ্ছে। ওই রাস্তাতেই রয়েছে অভিষেকের বাড়ি। সাংসদের বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল এগোল। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ডিএ আন্দোলনের শততম দিনে সরকারি কর্মীদের একাংশ মিছিল কলকাতায়। দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড় থেকে দুপুর ১টায় মিছিল শুরু হয়েছে। মিছিলে যোগ দিতে বিভিন্ন জেলা থেকে বাসে করে কলকাতায় এসেছেন সরকারি কর্মীরা। গান-স্লোগানে মুখরিত হাজরা চত্বর।
তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। শান্তি রক্ষা-সহ কিছু শর্তে হরিশ মুখার্জি রোড ধরে এই মিছিলের অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।
ডিএ মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। শীর্ষ আদালতে মামলা ঝুলে রয়েছে। ডিএ-র দাবিতে অতীতে কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। আবার ‘ডিজিটাল অসহযোহিতা’র পথেও হেঁটেছিলেন তাঁরা। এ বার কলকাতার রাজপথে মিছিল করছেন তাঁরা।
ডিএ-র দাবিতে শহিদ মিনারের নীচে অবস্থান করছেন সরকারি কর্মীদের একাংশ। সেই আন্দোলনের ১০০ তম দিন শনিবার। মিছিলের জেরে কলকাতার একাংশে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিছিল ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মিছিলে অশান্তি বাধানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন ডিএ আন্দোলনকারীদের একাংশ। এক আন্দোলনকারী বলেছেন, ‘‘আশঙ্কা করছি লোকজন ঢুকে অশান্তি করতে পারে। পুলিশকে জানিয়েছি। কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। আমাদের থেকে কোনও প্ররোচনা থাকবে না। সুশৃঙ্খল ভাবে মিছিল করব।’’
এই মিছিল করা নিয়ে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের সদস্যদের মধ্যেই মতানৈক্য প্রকাশ্যে এসেছিল। শনিবার মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘হাজরা মোড় থেকে মিছিল যাবে। হরিশ মুখার্জি স্ট্রিট হয়ে আবার হাজরা মোড়ে ফিরে আসবে। ১০০ দিনের উদ্যাপন হাজরা মোড়েই করছি।’’ হরিশ মুখার্জি রোড ধরে মিছিল প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘কোনও বিতর্ক নেই। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে কোনও জায়গায় প্রতিবাদ জানানোর অধিকার থাকা উচিত।’’
এর আগে, মিছিলে আপত্তির কথা জানিয়ে মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেছিলেন, ‘‘হাজরা মোড় থেকে হরিশ মুখার্জি রোড হয়ে হাজরা মোড়ে ফেরা কোনও মিছিলের রুট হতে পারে না। ওটা শাসক দলের এলাকা বলে পরিচিত। ওই রুটে কোনও অশান্তি হলে তার দায় কে নেবে? ওই রুটে মিছিলের ব্যাপারে আপত্তি ছিল মঞ্চের অধীনে থাকা বেশ কিছু সংগঠনের। তা সত্ত্বেও মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ-সহ কয়েক জন ওই রুটেই মিছিল করার অনুমতি চাইলেন।’’ তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থাকেন হরিশ মুখার্জি রোডে। কাছেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়া। বিশ্বজিতের মতে, মিছিল হোক নবান্ন অথবা বিধানসভার দিকে। তাঁর প্রশ্ন, হরিশ মুখার্জি রোড দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার যুক্তি কী?
ডিএ আন্দোলনের আবহে বেশ কয়েক বার নানা মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, ‘‘আমরা তো ম্যাজিশিয়ান নই। টাকাটাও জোগাড় করতে হবে। অনেকে বলে, এটা পেলাম, ওটা দাও, এটা পেলাম, ওটা দাও। আরে যেটা পেলে সেটাকে ধরে রাখতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন সেটা কোথা থেকে জোগাড় হবে? কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না। বঞ্চনা করছে আর মিথ্যা কথা বলছে।’’ আবার কখনও বলেছিলেন, ‘‘টাকা আকাশ থেকে পড়বে না।’’ আবার এ-ও বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি ভালবেসে দিই, নিশ্চয়ই দেব।’