কলকাতায় লালবাজারে পুলিশের সদর দফতরে খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। সেখানে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নজর পুলিশের। খতিয়ে দেখছেন মোকা নিয়ে প্রস্তুতি। ছবি: পিটিআই।
মোকার প্রভাব ভারতীয় উপকূলে, বিশেষত বাংলায় কতটা পড়বে? সেই নিয়ে চলছে জল্পনা। মৌসম ভবনের ধারণা, বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে মায়ানমার, বাংলাদেশের দিকে এগোবে মোকা। বাংলা বা ওড়িশায় তার তেমন প্রভাব পড়বে না। আলিপুর হাওয়া অফিসও তেমনটাই মনে করে। তা বলে প্রস্তুতির কোনও কসুর রাখা হচ্ছে না। ইতিমধ্যে দিঘায় আটটি দল এবং ২০০ জন উদ্ধারকারী পাঠিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)। তৈরি রয়েছে উপকূলরক্ষীবাহিনীও।
এনডিআরএফের সেকেন্ড ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট গুরমিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘আমরা আটটি দল এবং ২০০ জন উদ্ধারকারীকে পাঠিয়েছি দিঘায়। ১০০ জন উদ্ধারকারীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর, হলদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা, কুলতলি, কাকদ্বীপ, উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালিতে মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। মৎস্যজীবীদের আগে থেকেই সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে। ১২ থেকে ১৪ মে তাঁদের গভীর সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে। যাঁরা সমুদ্রে গিয়েছেন, তাঁদের ১১ মের মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিল হাওয়া অফিস। দিঘায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোলরুম। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের মূল প্রশাসনিক ভবনে খোলা হয়েছে জেলা পর্যায়ের কন্ট্রোল রুম। এ ছাড়াও ২৫টি ব্লক এবং ২২৩টি পঞ্চায়েতে কন্ট্রোল রুম চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতায় লালবাজারে কন্ট্রোলরুম খুলে নজর রাখছে পুলিশও।
মৎস্যজীবীদের পাশাপাশি পর্যটকদেরও সাবধান করছে পূর্ব মেদিনীপুর প্রশাসন। দিঘায় এই গরমেও পর্যটকদের ভিড় রয়েছে। ভিড় রয়েছে মন্দারমণিতেও। শুক্রবার সকালে দিঘার আকাশ সামান্য মেঘলা থাকলেও বেলা বাড়তেই রোদের তেজ বাড়তে থাকে। সমুদ্রও শান্ত। ঘূ্র্ণিঝড়ের কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে প্রশাসন সতর্ক। যাঁরা স্নান করতে নামছেন, জোয়ারের আগে তাঁদের উঠে যাওয়ার জন্য প্রচার চালিয়েছেন নুলিয়া এবং সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। সৈকতের ধারে বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ার থেকেও চলছে পুলিশের নজরদারি।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী ইতিমধ্যেই জেলার ২৫টি ব্লকের বিডিওদের নিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রস্তুতি সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক করেন। প্রতিটি ব্লকের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি।
মৌসম ভবনের বুলেটিন জানিয়েছে, শক্তি বাড়িয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে মোকা। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করছে। আবহাওয়া দফতর আরও জানিয়েছে, বর্তমানে পোর্ট ব্লেয়ার বন্দর থেকে ৫২০ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তর পশ্চিমে এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে ১০১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে মোকা। মায়ানমারের সিতওয়ে থেকে মোকা রয়েছে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর আরও উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে এগোচ্ছে মোকা। শনিবার ঘূর্ণিঝড়ের গতি সর্বোচ্চ থাকবে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। তবে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের পরাক্রম কমতে পারে রবিবার সকাল থেকে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, শক্তি কিছুটা কমিয়ে মোকা রবিবার দুপুর নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মায়ানমারের কাউকপুরের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। শক্তি কিছুটা কমলেও অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসাবেই ওই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে ঝড় অতিক্রম করতে পারে। ওই সময় ঝড়ের গতি হতে পারে ঘণ্টায় ১৫০-১৬০ কিলোমিটার। সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৭৫ কিলোমিটার।