রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। — ফাইল চিত্র।
মানুষের রক্ত দিয়ে ‘রাজনৈতিক হোলি’ খেলা বন্ধ করতে হবে। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থেকে এই বার্তাই দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। হিংসা বন্ধে কড়া পদক্ষেপ করার জন্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন তিনি। সোমবার কোচবিহার থেকে ফিরে বাসন্তীর গাগরামারি গ্রামে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেখানে অশান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। এর পর পৌঁছন ক্যানিংয়ে সেচ দফতরের বাংলোয়। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বাসন্তীর গাগরামারি গ্রামে নিহত যুব তৃণমূল কর্মী জহিরুল মোল্লার মেয়ে মনোয়ারা পিয়াদা। বাবার মৃত্যুর জন্য রাজ্যপালের কাছে সিবিআই তদন্তের দাবি জানান মনোয়ারা।
সোমবার সকালে কোচবিহার থেকে পদাতিক এক্সপ্রেসে শিয়ালদহ পৌঁছন রাজ্যপাল। সেখান থেকে সড়কপথে যান ক্যানিংয়ের গাগরামারি গ্রাম। কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। গত কয়েক দিন ধরেই অশান্ত হয়ে উঠেছে ওই এলাকা। রাজ্যপালকে কাছে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ তাঁকে জানান, এলাকায় বোমাবাজি হচ্ছে। গত শনিবার রাতে গুলি করে খুন করা হয়েছে গাগরামারি গ্রামের বাসিন্দা জহিরুলকে। রাজ্যপাল যখন গ্রামে যান তখন জহিরুলের পরিবারের কারও সঙ্গে দেখা হয়নি। রাজ্যপাল ক্যানিংয়ের উদ্দেশে রওনা দিতেই নিহতের মেয়ে তথা ওই এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী মনোয়ারা পৌঁছন তাঁর কাছে। তাঁর সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘মানুষের রক্ত নিয়ে রাজনৈতিক হোলি খেলা বন্ধ করতে হবে। আমি হিংসাদীর্ণ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি। আমি দোষ খুঁজতে নয়, প্রকৃত তথ্য জানতে ওই সব এলাকা ঘুরেছি।’’ বস্তুত কোচবিহার সফরকালে রাজনৈতিক অশান্তির অভিযোগ উঠেছে এমন কয়েকটি জায়গায় যান তিনি। কলকাতা ফিরেই তিনি পৌঁছন বাসন্তীতে। হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া চালানোর কথা রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, কমিশন কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখতে তিনি ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করবেন।
শনিবার রাতে বাসন্তীতে নিহত যুব তৃণমূল কর্মী জিয়ারুলের মেয়ে মনোয়ারা বাসন্তীর কাঁঠালবেড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁর বাবা ছিলেন যুব তৃণমূল নেতা আমানুল্লা লস্করের অনুগামী। ভোটের টিকিট নিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে বিবাদের জেরেই তাঁর বাবা খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ। মনোয়ারার আরও অভিযোগ, পুলিশকে বার বার জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সোমবার রাজ্যপাল তাঁর জেলায় আসছেন শুনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এক জনের বাইকে চড়ে ক্যানিং পৌঁছন তিনি। রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে মনোয়ারা বলেন, ‘‘আমার বাবা যুব তৃণমূল করত। তৃণমূলের লোক বাবাকে চাপ দিত। বাবা রাজনীতিও ছেড়ে দিতে চেয়েছিল। তার পর শনিবার বাবাকে খুন করা হয়েছে।’’