সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে সিপিআইএমের এসপি অফিস অভিযান। — নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মামলা করল সিপিএম। বিষয়টি বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের নজরে আনেন আইনজীবী শামিম আহমেদ। তাঁর আবেদন, সন্দেশখালি থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হোক। চালু করা হোক ইন্টারনেট পরিষেবা।
গত বুধবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বসিরহাট পুলিশ জেলার সন্দেশখালি। তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দারের গ্রেফতারের দাবিতে পথে নেমেছেন গ্রামবাসীদের একাংশ। উত্তমকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিরা এখনও অধরা। গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন মহিলারা। বাঁশ, কাটারি, দা, হাতা, খুন্তি, লাঠি নিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সন্দেশখালিতে। আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন একের পর এক পোলট্রি ফার্ম, বাগানবাড়িতে। অভিযোগ, গ্রামবাসীদের জমি জোর করে দখল করে ওই ফার্ম তৈরি করেছেন শিবুরা।
পুলিশ কড়া হাতে এই অশান্তি মোকাবিলা শুরু করেছে। সন্দেশখালির বিস্তীর্ণ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। সন্দেশখালিকে মুড়ে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া রয়েছে। থমথমে সন্দেশখালিতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতেই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে সিপিএম।
সোমবার বিচারপতি সেনগুপ্তর এজলাসে আইনজীবী শামিম আহমেদ সন্দেশখালির পরিস্থিতির কথা বলেন। সেই সঙ্গে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করার আবেদন জানান। বিচারপতি মামলা দায়ের করার অনুমতি দেওয়ার পরেই সিপিএম মামলা করে। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারি ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল সন্দেশখালিতে। তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতেই তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার পর থেকে পলাতক শাহজাহান।সেই ঘটনার মাসখানেক পর সম্প্রতি আবার উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি। দফায় দফায় সেখানে অশান্তি, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। অশান্তির ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের এক জন তৃণমূলের উত্তর সর্দার। সন্দেশখালিকাণ্ডে নাম জড়ানোর পরেই উত্তমকে সাসপেন্ড করে শাসকদল। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ ও সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে।
সোমবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সন্দেশখালিতে গিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পাশাপাশি সন্দেশখালি গিয়েছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বের বিজেপি বিধায়কদেরও সেখানে যাওয়ার কথা থাকলেও মাঝপথে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ।
অন্য দিকে, সোমবারই সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে সিপিআইএমের এসপি অফিস অভিযানকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বসিরহাট। টাউন হল থেকে মিছিল করে সিপিআইএম কর্মীরা আসেন এসপি অফিসের সামনে। সেখানে পুলিশ বাধা দিলে ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেন তাঁরা। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তার পরই এসপি অফিসের সামনে বসে বিক্ষোভ দেখান সিপিআইএম কর্মীরা।