সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। মুজফ্ফর আহমেদ ভবনে। —নিজস্ব চিত্র।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে বামফ্রন্টের মধ্যে আসন বণ্টনের সূত্র নতুন করে সাজাতে চাইছে সিপিএম। বাম শরিকদের কাছে আগেই ‘বাস্তবসম্মত’ তালিকা চাওয়া হয়েছে আসনের। এ বার দলের জেলা নেতৃত্বকেও সম্ভাব্য আসনের তালিকা তৈরি করার বার্তা দিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। জেলা ধরে ধরে সিপিএমের নিজস্ব তালিকা এবং বাম শরিকদের দেওয়া হিসেব মিলিয়ে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে বাম শিবিরে।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক শেষে হয়েছে বর্ষশেষের দিনে। সিপিএম সূত্রের খবর, বৈঠকে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জেলা নেতৃত্বের কাছে সাংগঠনিক শক্তির নিরিখে বিধানসভা আসনের প্রাথমিক তালিকা চেয়েছেন। রাজ্যে গত মাসে ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের পরেই সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করেছিলেন, বামফ্রন্টের মধ্যে আসন বণ্টনের প্রথা নতুন করে ভেবে দেখা হবে। বহু বছর ধরে যে শরিক দল যে আসনে লড়ে আসছে, সেখানে তারাই লড়বে— এই রেওয়াজ থেকে বেরোনো হবে। তার জন্য সাংগঠনিক ক্ষমতা যাচাই করে শরিক দলগুলিকে তাদের আসনের প্রাথমিক দাবি জমা দিতে বলা হয়েছিল ১৫ জানুয়ারির মধ্যে। সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে দলের জেলা নেতৃত্বের জন্য অবশ্য এই রকম কোনও সময়সীমা ধার্য করা হয়নি। সম্মেলন-পর্বের মধ্যেই যত দ্রুত সম্ভব, বিধানসভা নির্বাচনের এই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
সম্মেলন থেকে যে সব বিষয় উঠে আসছে, তার প্রাথমিক পর্যালোচনা হয়েছে রাজ্য কমিটিতে। জানুয়ারি থেকে শুরু হবে সিপিএমে সদস্যপদ পুনর্নবীকরণের প্রক্রিয়া। তরুণ ও মহিলা সদস্য বাড়ানোয় নজর দেওয়ার কথা ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক। সামাজিক বিন্যাস এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ দেখে সংশ্লিষ্ট অংশের সংগঠনে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘এক দেশ, এক ভোট’ নীতি এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আগামী ১২ জানুয়ারি রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়েছে। তার পাশাপাশি, ২৬ জানুয়ারি সংবিধান রক্ষার শপথ এবং ৩০ জানুয়ারি ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার বার্তা সামনে রেখে কর্মসূচি নেবে সিপিএম। সঙ্গে নেওয়া হবে অন্য বাম দলগুলিকেও।
দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটির জবাবি বক্তৃতায় মঙ্গলবার রাজ্য সম্পাদক সেলিম জানিয়ে দিয়েছেন, এক মহিলা সাংবাদিকের আনা ‘হেনস্থা’র অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির (আইসিসি) রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যকে ৬ মাসের জন্য নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। আগামী ১৭-১৯ জানুয়ারি কলকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের পরে শাস্তি কার্যকর হবে। দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে বিরোধের প্রসঙ্গ শেষ দিনেও উঠেছিল বৈঠকে। ওই জেলা থেকে দলের দুই নেতা আগের দিন এই বিষয়ে ‘উপদলীয় কার্যকলাপে’র অভিযোগ করেছিলেন। শেষ দিনে জেলার এক প্রাক্তন বিধায়ক ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তরুণ ও কার্যকরী নেতাদের যে ভাবে জেলা কমিটি থেকে বাদ রাখা হয়েছে, তারই প্রতিবাদ হয়েছে সম্মেলনে। সূত্রের খবর, দলের কৃষক, ক্ষেতমজুর ও শ্রমিক সংগঠনের মিলিত উদ্যোগে ব্রিগেড সমাবেশের পরিকল্পনা হচ্ছে। তবে এপ্রিলে পার্টি কংগ্রেসের আগে ওই সমাবেশের সম্ভাবনা কম।