‘‘২০২১ সালে দাঁড়িয়ে, বামপন্থী হয়ে বিজেপি-কে প্রধান শত্রু বলতে পারছি না, এই ভুলটা আমরা করতে চাইনি।’’ ফাইল ছবি।
রাজ্যে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রশ্নে বামপন্থীদের প্রাসঙ্গিকতার কথা ফের এক বার তুলে ধরলেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, আগামী দিনে বামপন্থীরা বাংলায় প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাবেন কি না, সেটা তার উপরে নির্ভর করছে। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে দীপঙ্কর বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে বাংলায় বামপন্থীদের প্রধান কাজ হল বিজেপি-কে তৃতীয় শক্তিতে পরিণত করা। এটা বামপন্থীদেরই কাজ। রাজ্যে বড় গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তার মধ্যে দিয়েই বাংলায় বামশক্তির পুনরুত্থান সম্ভব।’’
দীপঙ্করের মতে, বাংলায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশন সে ভাবে সাংগঠনিক শক্তি অর্জন করতে পারেনি। ব্যর্থতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভার পর পরিস্থিতি একটু ভাল। কারণ বিজেপি-র উচ্চকিত কোলাহলে অনেকেই মনে করেছিলেন, রাজ্যে বুঝি বিজেপি সরকার তৈরি হয়েই গেল। কিন্তু দেখা গেল, বিজেপি তার ধারেকাছেও পৌঁছতে ব্যর্থ। এই মুহূর্তে বামপন্থীদের কাজ হওয়া উচিত, বিজেপি-কে রাজ্যে তৃতীয় শক্তিতে পরিণত করা। তৃণমূল ক্ষমতায় আছে, সেখানে বামপন্থীদের প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে আসতে হবে।’’
দীপঙ্করের মতে, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার তৈরি হওয়ার সময় থেকে দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন বিভাজিকা তৈরি হয়েছে। মোদী-যোগীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক সম্পূর্ণ নতুন ধারার রাজনীতির। সেখানে বামপন্থা বা অবামপন্থা নিয়ে আলোচনার সময় নেই। রাজনীতির সম্পূর্ণ নতুন এই পর্যায়ে বামপন্থীদের সমস্ত বিজেপিবিরোধী শক্তিকে নিয়ে গণ আন্দোলনের পথে যেতে হবে। এ প্রসঙ্গেই দীপঙ্কর টেনে আনেন বাংলার বিধানসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণ। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ বিজেপি-কে রুখতে হাতের কাছে তৃণমূলকে বেছে নিয়েছে। কারণ গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষমাত্রই জানেন, বিজেপি-র থেকে অন্য যে কোনও দল অনেক ভাল।’’
তা হলে বিজেপি-কে রুখতে তিনি কি তৃণমূলের হাত ধরার কথা বলছেন? লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক বললেন, ‘‘ভোটের আগেই আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম, প্রধান শত্রু এক জনই। এ ক্ষেত্রে সেটা ছিল বিজেপি। আমি বলেছিলাম, বামপন্থীরা রাজ্যে বিজেপি-কেই এক নম্বর টার্গেট হিসেবে চিহ্নিত করুক। তা হলে হয়তো পরিস্থিতি একটু অন্য রকম হত। বিজেপি-কে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলেন না আমার সিপিএমের বন্ধুরা।’’ দীপঙ্করের মতে, বিজেপি-কে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা গেলে ভোটের ফলও হয়তো খানিকটা অন্যরকম হত। তিনি বলেন, ‘‘সে ক্ষেত্রে তৃণমূলই হয়তো ক্ষমতায় থাকতো, কিন্তু আসন হয়তো কমে ২০০ হত। বিজেপি-র আসন কমে ৫০-এর আশেপাশে থাকত। বামপন্থীদের অন্তত ২০-২৫টি আসন থেকে যেত।’’ দীপঙ্কর সাফ বলেন, ‘‘২০২১ সালে দাঁড়িয়ে, বামপন্থী হয়ে বিজেপি-কে প্রধান শত্রু বলতে পারছি না, এই ভুলটা আমরা করতে চাইনি। আর তাই আমরা আলাদা থেকেছি।’’