প্রতীকী চিত্র।
করোনা পুরোপুরি নতুন রোগ বলেই এর চিকিৎসায় পরীক্ষামূলক ভাবে নানা ধরনের ওষুধ-ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন, এইসিকিউ, আইভারমেকটিন। ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাজ়মা থেরাপিও। সেই ভাবেই এ বার ‘ককটেল থেরাপি’-ও প্রয়োগ করা হবে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এই থেরাপি আসলে এক রকম ইঞ্জেকশন, তার প্রতিটির খরচ ৬০ হাজার টাকা!
করোনার চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে পাঠানো ককটেল থেরাপির প্রায় ৩০০ ভায়াল বেশ কিছু দিন ধরে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সে পড়ে ছিল। স্বাস্থ্য দফতরের একাংশের ব্যাখ্যা, ওই ওষুধ পড়ে থাকার কারণ, কোথায়, কবে, কী ভাবে তা ব্যবহার করা যাবে, সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা ছিল না।
এর আগে পশ্চিমবঙ্গে কোনও সরকারি হাসপাতালে ককটেল থেরাপি প্রয়োগ করা হয়নি। একটি বেসরকারি হাসপাতালে দুই করোনা রোগীকে এই থেরাপি দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে এক জন ৭০ বছরের বৃদ্ধা, অন্য জন ৫৪ বছরের প্রৌঢ়। দু’জনেই সুস্থ আছেন। চড়া দাম বলেই বহু বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষে এই ওষুধ প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, সরকারি হাসপাতালে ককটেল থেরাপি শুরু হলে দরিদ্র রোগীও তার সুবিধা পাবেন। তবে সব ধরনের করোনা রোগীর উপরে ‘অ্যান্টিবডি ককটেল থেরাপি’ প্রয়োগ করা যাবে না। যাঁদের বয়স ১২ বছরের বেশি এবং ওজন ৪০ কিলোগ্রামের বেশি, যাঁদের অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন নেই, কিন্তু কো-মর্বিডিটি আছে এবং জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন, তাঁদের ক্ষেত্রেই এই থেরাপি করা যেতে পারে বলে চিকিৎসকদের অভিমত।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “চলতি সপ্তাহেই কলকাতা মেডিক্যাল, শম্ভুনাথ পণ্ডিত, এমআর বাঙুর ও আইডিবিজি— এই চারটি সরকারি হাসপাতালে ককটেল থেরাপি শুরু হবে।’’ ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)-র অধীন সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন' (সিডিএসসিও) এর ছাড়পত্র দিয়েছে।
ককটেল থেরাপির উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ। কারণ, আইসিএমআর এর আগে প্লাজ়মা থেরাপি সমর্থন করেনি। তা ছাড়া এইসিকিইউ বা আইভারমেকটিন থেরাপিও তেমন কার্যকর নয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। ‘‘প্লাজ়মা থেরাপি নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য রকম। আমরা খুব ভাল ফল পেয়েছি এবং করোনার চিকিৎসায় এটা ব্যবহার করছি,’’ বলেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তিনি জানান, প্লাজ়মা নেওয়ার সময় দেখে নেওয়া হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট রোগীর শরীরে কত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। খুব কম তৈরি হলে প্লাজ়মা দেওয়া হয় না। ‘‘হয়তো এই নিয়ম মানেননি বলেই অনেকে এই থেরাপিতে ভাল ফল পাননি,’’ বলছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।
অজয়বাবু জানান, স্বাস্থ্য দফতরের সমীক্ষা বলছে, সরকারি হাসপাতালে যাঁরা আইভারমেকটিন বা এইসিকিউ কোনওটাই খাননি, তাঁদের তুলনায় যাঁরা ওই দু’টির মধ্যে কোনও একটি খেয়েছেন, তাঁদের সুস্থতার হার অনেক বেশি। তাই আশা করা যায়, ককটেল থেরাপিতেও ইতিবাচক ফল মিলবে।
স্বাস্থ্য দফতরের কাছে করোনার ওষুধ রেমডেসিভিয়ার প্রচুর পরিমাণে পড়ে আছে এবং তা ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রুত বিভিন্ন হাসপাতালে ওই ওষুধ বিলি করা হবে। করোনার তৃতীয় তরঙ্গ চোখ রাঙাচ্ছে। তা এসে পড়লে ওই ওষুধ কাজে লাগতে পারে।