Pass-Fail System

স্কুলে পাশ-ফেল ফেরানোর কেন্দ্রীয় নীতি নিয়ে ব্রাত্যের বক্তব্যে ধন্দ! শিক্ষামন্ত্রীর দাবি অস্বীকার স্কুলগুলির

ব্রাত্য দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এখন যে নীতি গ্রহণ করেছে, তা রাজ্যে আগে থেকেই চালু রয়েছে। কেন্দ্র আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নীতিকেই অনুসরণ করছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৪৮
ব্রাত্য বসু।

ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।

পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে ফের পাশ-ফেল ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিবৃতিতে। ব্রাত্য দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এখন যে নীতি গ্রহণ করেছে, তা রাজ্যে আগে থেকেই চালু রয়েছে। কেন্দ্র আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নীতিকেই অনুসরণ করছে। যদিও শিক্ষামন্ত্রীর ওই দাবি ঘিরে ধন্দ তৈরি হয়েছে। রাজ্যের স্কুলগুলির একাংশের দাবি, শিক্ষামন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তা আদতে সত্য নয়।

Advertisement

২০১৯ সালে কেন্দ্র শিক্ষার অধিকার আইনে বদল এনে জানিয়েছিল, দেশের সব প্রান্তে পড়ুয়াদের বুনিয়াদি শিক্ষার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে কাউকে ফেল করানো হবে না। পাঁচ বছর পর সেই শিক্ষার অধিকার আইন ফের বদল আনা হচ্ছে। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণির কোনও পড়ুয়া পরীক্ষায় সফল না-হলে তাকে ফের সুযোগ দেওয়া হবে। ফলাফল বেরোনোর পর দু’মাসের মধ্যে ফের পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে অকৃতকার্য হওয়া পড়ুয়া। দ্বিতীয় পরীক্ষাতেও কোনও পড়ুয়া সফল না-হলে তাকে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে না বলে শিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। তবে কোনও পড়ুয়াকেই স্কুল থেকে বিতাড়িত করা যাবে না। দ্বিতীয় বারের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সহায়তা করবেন শ্রেণি শিক্ষকেরা। প্রয়োজনে গলদ কোথায়, তা খুঁজে বার করা হবে।

ব্রাত্যের দাবি, এই কেন্দ্রীয় নীতি ২০১৯ সাল থেকে এ রাজ্যে কার্যকর। নিজের বক্তব্যের সমর্থনে ২০১৯ সালে জারি হওয়া একটি বিজ্ঞপ্তিরও ছবি নিজের এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই সঙ্গে লিখেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের স্কুল শিক্ষা দফতর ২০১৯ সালেই পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়াদের মূল্যায়নের ওই নীতি কার্যকর করেছিল। এটা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। তবে কেন্দ্রীয় সরকার যে মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার কথা বলেছে, তার চেয়ে আমাদের এখানকার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত।’’

যদিও ব্রাত্যের দাবি অস্বীকার করেছেন পার্ক ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা এবং বাঙুর ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া। সুপ্রিয়ের বক্তব্য, ‘‘পাশ-ফেল নিয়ে আমাদের কাছে কোনও নির্দেশিকা ছিল না। আমরা ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করে থাকি। তাতে কারও বছর নষ্ট হয় না। নির্দেশ এলে আমরা তা মানতে বাধ্য।’’ সঞ্জয়ও বলছেন, ‘‘পাশ-ফেল প্রথা এ রাজ্যে এখনও চালু হয়নি। সরকারের তরফে কয়েক বছর আগে বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।’’

একই কথা বলেছেন সিলেবাস কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখানে পাশ-ফেল প্রথা নেই। কেন্দ্র যে মূল্যায়নের কথা বলেছে, তা-ও এখানে চালু নেই। তবে আমি পাশ-ফেল প্রথার বিরুদ্ধে। এই প্রথা চালু হলে এ রাজ্যে গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের বছর নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।’’

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আজ পাশ-ফেল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্য সরকারও কয়েক বছর আগে এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। কেন হয়নি, তার জবাব রাজ্য সরকারই দিতে পারবে। তবে কেন্দ্র আজ যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং রাজ্য ২০১৯ সালে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, দুটোরই আমরা বিরোধিতা করছি।’’

Advertisement
আরও পড়ুন