নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের মানিকপুর প্রাথমিক স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে নির্মাণ শুরু হয়েছে। তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল কলকাতা হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, স্কুলের বাচ্চাদের খেলার মাঠ খুঁড়ে নির্মাণের এই প্রবণতা ‘ভয়ঙ্কর’। সেই মামলায় সোমবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু নির্দেশ দেন, অবিলম্বে পুলিশকে ওই নির্মাণকাজ বন্ধ করতে হবে। খেলার মাঠকে আগের অবস্থা ফিরিয়ে দিতে হবে জেলা প্রাথমিক স্কুল কাউন্সিলকে। আদালতের নির্দেশ যে কার্যকর করা হয়েছে, এই মর্মে রাজ্যকে রিপোর্ট দিতে হবে বলেও জানিয়েছে হাই কোর্ট।
প্রাথমিক স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে নির্মাণের অভিযোগ তুলে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক অভিভাবক। তিনি জানান, তাঁর মেয়ে ওই স্কুলে পড়াশোনা করে। সেই স্কুল লাগোয়া খেলার মাঠ বন্ধ করে নির্মাণ হচ্ছে। ফলে শিশুদের আর খেলার জায়গা থাকবে না। মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম এবং গোপা বিশ্বাস সওয়াল করেন, কেন্দ্রের শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী প্রত্যেকের স্কুলের সঙ্গে খেলার মাঠ থাকা জরুরি। প্রায় ৫০ বছর ধরে ওই মাঠ রয়েছে। আইনজীবীদের প্রশ্ন, এখন হঠাৎ কী প্রয়োজনে ওই মাঠ দখল করে নির্মাণ হচ্ছে? তাঁদের দাবি, আইনমাফিক ওই কাজ হচ্ছে না। জেলা প্রাথমিক স্কুল কাউন্সিলের আইনজীবীও জানান, সেখানে খেলার মাঠ থাকা দরকার। ওই স্কুলের জায়গাটির জন্য বিএলআরও-কে নির্দেশ দেওয়া হোক। স্কুলের মাঠে নির্মাণকাজ হওয়া উচিত নয়।
রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘জানতে পেরেছি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র অন্য জায়গা থেকে সরিয়ে ওখানে নিয়ে আসা হবে। তাই সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে।’’ বিচারপতি বসুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আপনারা কী ভাবে এটা করতে পারেন? অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সঙ্গে প্রাথমিক স্কুলের কী সম্পর্ক? নিজেদের নীতি পরিবর্তন করুন। কেন এ ভাবে নির্মাণ করতে হবে?’’ বিচারপতির হুঁশিয়ারি, ‘‘দ্রুত ওই কাজ বন্ধ করুন। অন্য কিছু শুনতে চাই না। কোন থানা এলাকায় এমন কাজ হচ্ছে? ওই মাঠের পরিবেশ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিন। আগের মতো ওই মাঠে আবার যেন বাচ্চারা খেলতে পারে।’’
প্রায় ৭০ বছর আগে স্কুল এবং খেলার মাঠ তৈরির জন্য এক ব্যক্তি মৌখিক ভাবে জায়গা দান করেছিলেন। ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পরে স্কুল জায়গাটি ব্যবহার করে। মানিকপুর গ্রামে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে স্কুলটি রয়েছে। সম্প্রতি ওই গ্রামের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য অশোক মাইতি সেখানে খেলার মাঠ নষ্ট করে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র তৈরি করছেন বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। ওই কাজ বন্ধ করে দিল হাই কোর্ট।