যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
গত বছর অগস্টে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের সুপারিশের ভিত্তিতে তাঁকে সাসপেন্ড করে মেন হস্টেল থেকে বহিষ্কার করেন যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হাই কোর্টের স্থগিতাদেশে সেই নির্দেশ কার্যকর করা যায়নি। গত বছর তিনি মামলা লড়ার টাকা জোগাড় করতে হস্টেলে ফের সভা বসান বলে অভিযোগ ওঠে। তাতেও তাঁকে হস্টেল থেকে সরানো যায়নি। এ বার ফিল্ম স্টাডিজ স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের সঙ্গে পুরনো ঝগড়ার বদলা নিতে মেন হস্টেলে আটকে সাঙ্গোপাঙ্গ জুটিয়ে ফেসবুকে কার্যত মুচলেকা লিখিয়েছেন তিনি, উঠেছে অভিযোগ।
এই সূত্রে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে ‘হুমকি-প্রথার’ নমুনা ফের প্রকাশ্যে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকের মত। যাদবপুরে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি ও অন্তর্বর্তী উপাচার্যের কাছে মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রের নামে অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার তদন্ত কমিটি বসিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত এ দিন বলেন, “ফার্মাসি বিভাগের এক জন মাস্টারমশাইয়ের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখে যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট দেবে।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যদের আক্ষেপ, নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও ছাত্রদের একাংশের অভব্যতায় লাগাম পরাতে ব্যর্থ হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের ১০ অগস্ট র্যাগিং-কাণ্ডে মেন হস্টেলে বাংলা স্নাতক প্রথম বর্ষের নবাগত এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় পরোক্ষ ভাবে জড়িত বেশ কয়েক জন ছাত্র এখনও যাদবপুরে ঘুরছেন। তাঁদের এক জনের নামেই ফের উঠেছে মেন হস্টেলে ‘হুমকি-প্রথা’ চালানোর অভিযোগ। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওই ছাত্র ইতিমধ্যে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ে চাকরি পেয়েছেন। যাদবপুরের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির অবশ্য সিদ্ধান্ত, র্যাগিংয়ে জড়িত কাউকে মার্কশিট দেওয়া হবে না। এ দিন অংশুমান মণ্ডল নামের ওই ছাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
অভিযোগকারী ফিল্ম স্টাডিজের ছাত্র অরণি ঘোষ এ দিন বলেন, “আমার সার্বিক ভাবে মেন হস্টেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। কিন্তু মেন হস্টেলে অল্প কয়েক জনের দৌরাত্ম্যে যাদবপুরের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “র্যাগিংয়ে জড়িত অংশুমানকে গত বছর যাদবপুরের নবাগতদের সঙ্গে কথা বলতে দেখে আমি ফেসবুকে লিখে প্রতিবাদ করেছিলাম। এর জেরেই ওই ছেলেটি রটায়, আমি গোটা মেন হস্টেলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছি। অংশুমান এবং আরও জনা ১৫ চার-পাঁচ ঘণ্টা আমাকে হস্টেলে আটকে রেখে হুমকি দেয়, ফেসবুকে পোস্ট লিখে মেন হস্টেলের সবার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে।”
অরণি যাদবপুরে ‘ইনকিলাবি স্টুডেন্ট ইউনিটি’ বলে একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। তাঁকেও গত ১ মার্চ ব্রাত্য বসুর গাড়ির কাছে বিক্ষোভ দেখাতে দেখা যায়। রাজ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক যাদবপুরের গবেষক সঞ্জীব প্রামাণিকের অভিযোগ, “অরণি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রকে নিগ্রহে অভিযুক্ত। তিনি মেন হস্টেলে ঢোকার সময়ে নিয়মমাফিক কোনও খাতায় সই করেননি। হঠাৎ এই অভিযোগ সন্দেহজনক ঠেকেছে।” অংশুমান র্যাগিংয়ে পুরনো অভিযুক্ত বলে মেনে নিয়ে তিনি অবশ্য বলছেন, “দু’টি অভিযোগেরই তদন্ত হওয়া উচিত।” অরণির বক্তব্য, “আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলে তারও তদন্ত হোক। হস্টেলে ঢোকার সময়ে কেউ সই করতে বলেননি, আমিও করিনি। তবে সিসি ক্যামেরায় প্রমাণ থাকবে।” তাঁকে আটকে রেখে হুমকি ও ভয় দেখানোয় জড়িতরা ‘কালেক্টিভ’ বলে একটি সংগঠন করে বলে দাবি অরণির। ২০২৩-এ মেন হস্টেলে ছাত্র মৃত্যুর পরে কালেক্টিভের ছাত্রদের সঙ্গে অন্য বাম, অতিবাম বা যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র নেতৃত্বের দূরত্ব তৈরি হয়।
এই আবহেই অন্তর্বর্তী উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত এ দিন উচ্চ শিক্ষা দফতরে আগামী ৩১ মার্চ তাঁর অবসরগ্রহণের বিষয়টি জানিয়েছেন। এর মধ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ না হলে যাদবপুরের পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।