ছবি আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।
কালীপুজোর রাতে আচমকাই প্রিয় সুব্রত’দার মৃত্যুর খবর শুনে এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে ভিড় বাড়ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বটেই, একে একে জড়ো হয়েছিলেন অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মতো রাজ্যের একাধিক নেতা-মন্ত্রী। অভিভাবকসম দাদাকে শেষ দেখা দেখতে চলে আসেন একডালিয়া এভারগ্রিনের বহু সদস্যও। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁদের চোখের সামনেই স্ট্রেচারে বার করা হল সদ্যপ্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নশ্বর দেহ। চোখের জলে এককালের সহযোদ্ধাকে বিদায় দিলেন সুব্রতর অনুরাগী ও গুণমুগ্ধরা।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ২৪ মিনিটে এসএসকেএম হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগ থেকে সুব্রতর দেহ বার করা হয়। সেখান থেকেই তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তপসিয়ার ‘পিস ওয়ার্ল্ড’-এ। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত অনুরাগীদের শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের জন্য তা রাখা থাকবে রবীন্দ্র সদনে। সেখান থেকে প্রথমে সুব্রতর বিধানসভা কেন্দ্র বালিগঞ্জে। দুপুর ২টো নাগাদ একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের কাছে সুব্রতর বাড়িতে তাঁর দেহ রাখা হবে। তার পর ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হবে সুব্রতর দেহ। সবশেষে সেখান থেকে কেওড়াতলা শ্মশানে সুব্রতর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
কালীপুজোর সন্ধ্যা আচমকাই সুব্রতর শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা শুনে হাসপাতালে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়ির কালীপুজোর জন্য মুখ্যমন্ত্রী সেখানেই ছিলেন। তবে তার মাঝেও রাতে ফোন করে সুব্রত শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন তিনি। পরে হাসপাতালে পৌঁছে প্রথমে কার্ডিওলজি বিভাগে যান। পরে উডবার্নে গিয়ে সুব্রতর প্রয়াণের খবর ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, ববি হাকিমের মতো রাজনীতিক। এসেছিলেন শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মহুয়া মৈত্র, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মানস ভুইয়া, সোমেন মিত্রের স্ত্রী, শিখা মিত্র, সৌগত রায়েরা— সুব্রতর মরদেহের সামনে অনেকেই চোখের জল চেপে রাখতে পারেননি।
হঠাৎ করে সুব্রতর শারীরিক অবস্থার অবনতি এবং তার পর আকস্মিক প্রয়াণে এখনও বিস্ময় কাটছে না এসএসকেএম হাসপাতালের অনেকের। গত ২৪ অক্টোবর এই হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পর আইসিইউ-তে ছিলেন। পরে ফের কার্ডিওলজি বিভাগের কেবিনে পাঠানো হয় তাঁকে। ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হচ্ছিল। এমনকি, বৃহস্পতিবার বিকেলেও স্থিতিশীল ছিলেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। সকালে উডবার্নের ১০২ নম্বর কেবিনে সরানো হয়েছিল সুব্রতকে। স্ত্রী-র উপস্থিতিতে খাবারও খেয়েছেন। সন্ধ্যাবেলাও ফের হাল্কা খাবার খান তিনি।
সুব্রতর চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকেরা সকাল-বিকেল তাঁকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁরাই জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলেও স্থিতিশীল ছিলেন সুব্রত। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। এমনকি, চলতি সপ্তাহান্তে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ারও কথা ভাবছিলেন চিকিৎসকেরা। তবে তা আর হয়নি! বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ বাথরুমে গিয়েছিলেন সুব্রত। তার পর বুক ধড়ফড়ানি শুরু হয় তাঁর। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকেরা চলে আসেন। খবর দেওয়া হয় সিনিয়র চিকিৎসকদেরও। কার্ডিলজি বিভাগের চিকিৎসক সরোজ মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে ছিলেন সুব্রত। সরোজ ছাড়াও সৌমিত্র ঘোষ, সুজয় ঘোষ, সোমনাথ কুন্ডু এবং অসীম কুন্ডু— মেডিক্যাল বোর্ডের পাঁচ সদস্য দ্রুত হাসাপাতালে চলে আসেন। সে সময় হৃদ্রোগেও আক্রান্ত হন সুব্রত। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর যাবতীয় প্রোটোকল মেনে চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। ভেন্টিলেটরে দেওয়ার পর সিপিআর-ও দেওয়া হয়। সে সময়ই উডবার্ন থেকে কার্ডিওলজির আইসিসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। তবে সেখানে শেষচেষ্টার ফলও বিফলে যায়।
মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা জানিয়েছেন, আগে থেকেই হৃদ্রোগের সমস্যায় ভুগছিলেন সুব্রত। চিকিৎসাধীন থাকাকালীন তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। গত সপ্তাহে হার্ট ফেলিওয়রও হয়েছিল। সেটা থেকেও উতরে যাচ্ছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টই প্রাণঘাতী হয়ে গেল!