রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোট থেকে বিধানসভার অধিবেশন— সম্প্রতি রাজ্যপালের সঙ্গে নবান্নের সংঘাত চরমে উঠেছে। এই আবহে মঙ্গলবার বিকেলে রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সাক্ষাৎ সেরে ফুরফুরে মেজাজেই বার হলেন মমতা। বেরিয়ে তিনি বললেন, ‘‘দুধ-চা খেয়েছি, বিস্কুট খাইনি।’’ কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে রাজ্যপালের সঙ্গে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, দু’টি বিল নিয়ে কথা হয়েছে রাজ্যপালের সঙ্গে।
পঞ্চায়েত ভোটের পর রাজ্যে বিধানসভা অধিবেশন নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে আরও এক বার সংঘাতে জড়ায় সরকার। শেষ পর্যন্ত রাজ্যপালের সম্মতিতে সোমবার, ২৪ জুলাই শুরু হয়েছে অধিবেশন। এই আবহে মঙ্গলবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন মমতা। বেরিয়ে তিনি বললেন, ‘‘বিধানসভায় বিল প্রায় হাতে নেই। তবু বছরে কিছু দিন বিধানসভা করতেই হয়। রাজ্যপালকে বলে গেলাম দু’টি বিল হতে পারে। পাশ করানোর জন্য রাজ্যপালকে বলে গেলাম।’’ কী বিল, তা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী জানাতে চাননি। এ বিষয়ে তিনি স্পষ্টই বলেন, ‘‘যত ক্ষণ রাজ্যপাল পাশ না করছেন, আমরা বলি না। বিধানসভার কিছু সিক্রেসি রয়েছে।’’ এর পর তিনি রাজভবনে চা খাওয়ার কথাও জানান সাংবাদিকদের। এ-ও জানান, বিস্কুট খাননি তিনি। উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে শিক্ষা দফতরের সংঘাতের আবহে সেই নিয়ে কথা হয়েছে কি না, প্রশ্ন করা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। তিনি জানিয়েছেন, এই প্রসঙ্গে কোনও কথা হয়নি।
রাজ্যপাল বোসের সঙ্গে নবান্নের সম্পর্কের শুরুটা ছিল মসৃণ। রাজ্যপালের জন্য ‘হাতেখড়ি’ অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয় নবান্নের উদ্যোগে। কিন্তু ক্রমে সংঘাতের আবহ তৈরি হতে থাকে। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে শিক্ষা দফতরের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় রাজ্যপালের। এর পর পঞ্চায়েত ভোট পর্বে সেই সংঘাত চরমে ওঠে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে রাজীব সিংহের নিয়োগপত্র ফিরিয়ে নেন তিনি।
মনোনয়ন পর্ব থেকে রাজ্যে হিংসার অভিযোগ ওঠে। সেই নিয়ে বার বার কমিশনের দিকেই আঙুল তোলেন রাজ্যপাল। কমিশনার রাজীবকে রাজধর্ম স্মরণ করান তিনি। শেক্সপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের প্রসঙ্গ তুলে এমনও বলেন যে, গঙ্গার জলও রাজীবের হাতের ‘রক্ত’ ধুতে পারবে না। এমনকি শান্তি এবং সংহতি কমিটিও গড়েছিলেন রাজ্যপাল। রাজভবনের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, “এই কমিটি সমাজে হিংসা প্রতিরোধ করার পাশাপাশি, আগামী দিনের ছাত্র সমাজকে শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেবে।” রাজভবন সূত্রে দাবি করা হয়, পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে যে ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অশান্তির ঘটনা ঘটেছে তাতে চিন্তিত রাজ্যপাল বোস। ওই সূত্রের মতে, কোনও অবস্থাতেই যাতে রাজ্যে আর অশান্তির ঘটনা না ঘটে সেই কারণেই এমন পদক্ষেপ করেছেন তিনি। এর আগে রাজভবনে ‘শান্তিকক্ষ’ গড়েছিলেন রাজ্যপাল বোস। পাশাপাশি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সন্ত্রাস কবলিত এলাকা ভাঙড়, ক্যানিং, বাসন্তী-সহ কোচবিহারেও গিয়েছিলেন তিনি।
বিষয়গুলিকে ভাল চোখে দেখেনি রাজ্য সরকার। বার বার রাজ্যপালকে পাল্টা কটাক্ষ করেছে রাজ্যের শাসকদল। এই আবহে বিধানসভা অধিবেশনকে কেন্দ্র করে ফের শুরু হয় সংঘাত। সোমবার, ২৪ জুলাই থেকে বিধানসভার অধিবেশন শুরু হচ্ছে ধরে নিয়ে গত বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার বিধানসভায় বসবে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক। পঞ্চায়েত ভোটের কারণে গত এক মাস মন্ত্রিসভার কোনও বৈঠক হয়নি। তাই সোমবার আবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হবে বলে জানানো হয়। এর পর বুধবার পরিষদীয় দফতর থেকে অধিবেশন শুরুর অনুমতি চেয়ে রাজভবনে ফাইল পাঠানো হয়। কিন্তু তাতে সম্মতি না দিয়ে পাল্টা মন্ত্রীকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল বোস। বুধবার পরিষদীয় মন্ত্রী শহরে না থাকায়, তাঁর বদলে দফতরের কোনও আধিকারিককে রাজভবন পাঠানোর কথা বলা হয়। কিন্তু রাজভবন পাল্টা জানিয়ে দেয়, মন্ত্রী না আসতে পারলে রাজ্যের মুখ্যসচিব আসুন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজভবনে যাননি মুখ্যসচিব। অবশেষে শুক্রবার রাজ্যপালের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাতেই সমস্যার সমাধান সূত্র বার করা হয়। শেষ পর্যন্ত সোমবার থেকেই শুরু হয় বিধানসভায় অধিবেশন। এই পরিস্থিতিতে রাজভবনে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী। বেরিয়ে তিনি জানালেন, বিধানসভা অধিবেশনের কারণে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্যই এসেছেন।