মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুজো কমিটিগুলির জন্য সরকারি অনুদান আবার বৃদ্ধি পেল। গত বছর পুজো কমিটিগুলিকে দেওয়া হয়েছিল ৭০ হাজার টাকা। এ বছর ৪৩ হাজারেরও বেশি পুজো কমিটিকে ৮৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে মঙ্গলবার ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, আগামী বছর এই অনুদান আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের বিলে ছাড় বৃদ্ধির কথাও ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা যাতে না হয়, তা নিয়ে পুজো কমিটিগুলিকে সতর্কও করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তিনি চলে যান নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। সেখানেই রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তা, কলকাতা পুলিশের আধিকারিক এবং ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’ সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আগামী শারদোৎসব নিয়ে বৈঠক করেন। ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগ দেন জেলা পুজো কমিটিগুলির প্রতিনিধিরাও। সেখানেই মমতা ঘোষণা করেন, চলতি বছর ৪৩ হাজার ক্লাবকে দুর্গাপুজোর জন্য ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। এর মধ্যে ৪০ হাজার পুজো রয়েছে জেলাগুলিতে। ২০২৫ সাল থেকে এই অনুদান বৃদ্ধি পেয়ে হবে এক লক্ষ টাকা। গত বছরও ক্লাবগুলির জন্য অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সে বার ৭০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছিল ক্লাবগুলিকে। ২০২২ সালে প্রতিটি ক্লাব পেয়েছিল ৬০ হাজার টাকা করে। পুজো কমিটিগুলিকে বিদ্যুতের মাসুলেও ৭৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার জন্য সিইএসই এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদকে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বছর বিদ্যুতের মাসুলে ৬৬ শতাংশ ছাড় দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন মমতা। তার আগের বছর ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছিল।
চলতি বছর ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী। পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে মমতা জানান, আগামী ১৫ অক্টোবর কলকাতায় হবে প্রতিমা নিরঞ্জনের কার্নিভাল। জেলায় কবে হবে কার্নিভাল, তা জেলা প্রশাসনকে ঠিক করার জন্য বলেছেন তিনি।
পুজোয় পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা যাতে কোনও ভাবেই না ঘটে, তা নিয়েও কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ এই বিষয়ে সতর্ক থাকে। সেই সঙ্গে ক্লাবগুলিকেও সতর্ক থাকার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা-সহ জেলার পুজোগুলিতে বিভিন্ন রকম থিম থাকে। এই থিমের জন্য কারও যাতে সমস্যা না হয়, সে দিকেও নজর রাখার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুজো কমিটিগুলির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘পুজোর থিম প্রকাশ করতে বলছি না। কিন্তু নতুন কী করছেন, তা পুলিশকে জানিয়ে রাখুন।’’ এই প্রসঙ্গে নাম না করে তিনি শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের পুজোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর শ্রীভূমির পুজোয় দু’বছর আগে লেজ়ার আলোর কারণে সে বার বিমানের উড়ানে সমস্যা দেখা গিয়েছিল বলে অভিযোগ। এই বিষয়টি মনে করিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কাগজে দেখলাম ১১২ ফুটের দুর্গা। ভাবতে পারেন! যে কেউ পদপিষ্ট হয়ে যেতে পারেন। এই নয়, আমি একটা চমক দিয়ে লাইটিং, লেজ়ারের খেলা করলাম। বিমান দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারে। অন্য মানুষের ক্ষতি হতে পারে।’’ পুজো কমিটিগুলির একাংশের ধারণা, মন্ত্রী সুজিতকেই বার্তা দিয়েছেন মমতা।
পুজোমণ্ডপগুলিতে কড়া নজরদারি রাখার কথাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ড্রোন, সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নজরদারি চালাতে হবে। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকায় চড়া নিয়েও সতর্ক করেছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, মণ্ডপে প্রবেশ এবং প্রস্থানের জন্য একটা গেট হলে চলবে না। মণ্ডপে আসা মহিলাদের নিরাপত্তা, প্রবীণদের সুবিধার দিকটিও পুজো কমিটিগুলিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন তিনি। মমতা এ-ও জানিয়েছেন, তিনি পুজোমণ্ডপে প্রবেশের জন্য ‘ভিআইপি কার্ড’-এর পক্ষে নন।
মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। তাঁকে উদ্দেশ্য করে মমতা জানিয়েছে, পুজোর সময়ে কেউ অসুস্থ হলে যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা পান, তা দেখতে হবে। এই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। কন্ট্রোল রুম খোলারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল।
বৈঠকে ডিজি রাজীব জানান, পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং পরিশ্রমের মাধ্যমেই হয় পুজো। কারও যাতে অসুবিধা না হয়, তাই পরিশ্রম করতে হবে। বিনীত জানিয়ে দেন, এ বছরও ‘আসান’ পোর্টালের মাধ্যমে পুজোর অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারবে পুজো কমিটিগুলি। গত বছর পুজোমণ্ডপগুলিতে কত ক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছিল, তা জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। এ বছরও সেই ব্যবস্থা থাকবে।