(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও (ডান দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। — ফাইল চিত্র।
উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের ভূমিকা নিয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজ্যপালের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছিলই। সাম্প্রতিক সেই ঘটনাপ্রবাহে দ্বন্দ্ব আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগপত্র নবান্নে ফেরত পাঠিয়ে যে অবস্থান রাজ্যপাল নিয়েছেন, এমন নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী গোটা দেশ। সেই সংঘাতপূর্ণ আবহে একই সময়ে উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রবিবার পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারের লক্ষ্যে কোচবিহারে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক তার পর দিন, অর্থাৎ সোমবার উত্তরবঙ্গ যাচ্ছেন রাজ্যপাল। প্রথম দু’দিন তাঁর গন্তব্য হবে দার্জিলিংয়ের রাজভবন। একই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের সফর নিয়ে উত্তরবঙ্গের রাজনীতির উত্তাপ বাড়তে পারে বলেই মনে করছে রাজ্যের রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যপালের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নয় নবান্ন। এমনিতেই রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করায় ক্ষুব্ধ নবান্ন। তার পর পঞ্চায়েত ভোটে আক্রান্তদের জন্য রাজভবনে হেল্পলাইন নম্বর খোলা, এবং বিরোধীদের সন্ত্রাসের অভিযোগ পেয়ে ক্যানিং-ভাঙর সফরে নিজেই চলে যাওয়ার ঘটনায় ক্রমশ দূরত্ব বেড়েছে রাজভবন-নবান্নের।
এমন ঘটনায় তৃণমূল নেতাদের কড়া আক্রমণের মুখে পড়েছেন রাজ্যপাল। তাতেও নিজের অবস্থান বদল না করে অনড় থেকে আনন্দ বোস আগামী দিনে আরও কঠিন পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁর এই সফরে আগামী বুধবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকে বসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যা নিয়ে মোটেই খুশি নয় রাজ্য সরকার। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া আচার্য যে সব অস্থায়ী উপাচার্যকে বেছে নিয়েছিলেন, তাঁদের তিনি বৈঠকে ডেকেছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। ২৮ জুন বুধবার রাজ্যপাল উপাচার্যদের মুখোমুখি হবেন। শনিবার সেই বার্তা রাজভবন থেকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। মোট ১৩ জন উপাচার্যকে এই বৈঠকে রাখা হয়েছে। শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে একক ভাবে এই বৈঠক ডেকেছেন রাজ্যপাল। আর তাতেই সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। রাজ্যপাল যদি একক ভাবে সরকারকে এড়িয়ে চলতে চান, তা হলে সংঘাত অনিবার্য বলে মনে করছেন রাজ্যের শাসকদলের একাংশ।
সম্প্রতি রাজ্যপালের ভূমিকা যে তাঁকে ক্ষুব্ধ করেছে তা নবান্নের এক সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পটনা থেকেও সমালোচনা করেছিলেন রাজ্যপালের ভূমিকার। কিন্তু তাতেও রাজ্যপাল নিজের অবস্থান বদল করেননি। তাই উত্তরবঙ্গে গিয়ে রাজ্যপাল রাজ্য সরকার বা শাসকদলের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করলে তার জবাব দেওয়া হতে পারে তৃণমূলের তরফে। সে ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির সভায় হাজির থাকবেন উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতারা। তাই মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চ থেকে তারাও সরাসরি রাজ্যপালকে নিশানা করতেন পারেন বলেই জানাচ্ছে শাসকদলের একটি সূত্র। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সভা ও রাজ্যপালের পৌঁছানোর সময়ের অপেক্ষা করছেন বাংলার রাজনীতির কারবারিদের বড় অংশ।