অমিত শাহ এবং শান্তনু ঠাকুর। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়া রুখতে অবশেষে সক্রিয় কেন্দ্রীয় সরকার। এই সমস্যা তৈরি হওয়ার পরে সব চেয়ে বেশি সমস্যার কথা বলছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তাঁদের মধ্যে আতঙ্কও ছড়ায়। এ বার কেন্দ্রের তরফে এই সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হল মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে। সোমবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে এই সমস্যা তৈরি হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন শান্তনু। তিনি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্যই এই সমস্যা হয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। সেখানে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও ছিলেন। বৈঠকে শাহ আমাকে এই সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দিয়েছেন।’’
প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে ওই বৈঠকের পরেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে এই ঘটনায় আধারের রাঁচী আঞ্চলিক দফতরের ভুল হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি সব সমস্যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিটে যাবে বলেও দাবি করেন। তবে শান্তুনু এত কম সময়ের কথা বলেননি। তিনি জানিয়েছেন, যাঁদের এমন সমস্যা হয়েছে, তাঁদের একটি ফর্ম পূরণ করে নতুন করে আধার সক্রিয় করার আবেদন করতে হবে।’’ তিনিও গোটা কাজটি করে দেবেন জানিয়ে শান্তুনু বলেন, ‘‘আমায় ফোনে বা ইমেল করে ফর্ম পাঠাতে হবে। এর পরে আমিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে জমা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব আধার সক্রিয় করে দেব। গ্রাহকদের কাছে এই সমস্যার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাবতীয় সঙ্কট কাটিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেব আমি।’’ সাংবাদিক বৈঠকে একটি ফোন নম্বর ও ইমেল আইডিও সাধারণের জন্য দিয়েছেন শান্তনু। একই সঙ্গে বলেছেন, ‘‘শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশের যে কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে এবং ফর্ম পূরণ করে পাঠালে আমি দায়িত্ব নিয়ে আধার সক্রিয় করে দেব।’’
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সমালোচনা করেন শান্তনু। প্রসঙ্গত, গত রবিবার সিউড়ির জনসভায় উপস্থিত রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিককে আধার সংক্রান্ত বিষয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ জানানোর মঞ্চ হিসেবে একটি পোর্টাল তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। সভা শেষ হওয়ার সময়েই মঞ্চ থেকে মুখ্যসচিবকে দ্রুত আধারের অভিযোগ জানানো সংক্রান্ত পোর্টাল চালু করে তার বিজ্ঞপ্তিও জারি করতে নির্দেশ দেন।
ওই সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমি পরিষ্কার বলে যাচ্ছি, আধার না থাকলেও আমাদের কোনও প্রকল্প বন্ধ হবে না। নিজেদের কার্ড দিয়ে চালিয়ে যাব। দিল্লি যা করছে, থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দেব। আধার কার্ড, রেশন কার্ড, স্মার্ট কার্ড, কোভিড কার্ড, জন্মের কার্ড, এত কার্ড কি গলায় মালা করে রাখবেন? তার পর আবার কাউকে জিজ্ঞেস না করে বাতিল করে দিচ্ছে। বাংলার মানুষকে বলব, ভয় পাবেন না। আমি আছি। যদি দেখি এর মধ্যে ছলনা আছে, বাংলার একটি প্রকল্পকেও আমি আধার সংযুক্ত হতে দেব না।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আর ব্যাঙ্ক যদি মনে করে আধার কার্ড না হলে আমি (টাকা) দেব না, তা হলে দরকার হলে আমরা ব্যাঙ্ক ছাড়াই কাজ করব। আমাদেরও তো কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক রয়েছে।’’ এই প্রসঙ্গে শান্তুনু বলেন, ‘‘এটা রাজ্য করতেই পারে না। নতুন করে চিটফান্ডের ফাঁদ পাতা হচ্ছে।’’