Second Hoogly Bridge

সড়কে কেন্দ্রের বিপুল বরাদ্দ, গঙ্গার উপরে আরও একটি নতুন সেতু পেতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ

প্রতিটি প্রকল্পই আর্থিক করিডরের মর্যাদা পাচ্ছে এবং সেগুলিতে চার লেনের (৭০-৯০ মিটার চওড়া) সড়ক তৈরি করা হবে। ফলে জমির ব্যবস্থা করা রাজ্যের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

Advertisement
চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৫৬
গঙ্গা-ভাগীরথীর উপরে আর একটি সেতু পেতে চলেছে কলকাতা।

গঙ্গা-ভাগীরথীর উপরে আর একটি সেতু পেতে চলেছে কলকাতা। ফাইল ছবি

সব ঠিকঠাক থাকলে হাওড়া ব্রিজ, দ্বিতীয় হুগলি সেতু, দ্বিতীয় বিবেকানন্দ সেতুর পরে গঙ্গা-ভাগীরথীর উপরে আর একটি সেতু পেতে চলেছে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বারাণসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আওতায় নতুন সেতুটি তৈরির ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্র। আরও দু’টি বড় মাপের এক্সপ্রেসওয়ের (রক্সৌল-হলদিয়া, খড়্গপুর-মোড়গ্রাম) পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করেছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে সড়ক পরিকাঠামো খাতে কেন্দ্রের কাছ থেকে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকার সুবিধা পাচ্ছে বাংলা এবং নতুন সেতু পাওয়া যাবে সেই সুবাদেই।

Advertisement

প্রতিটি প্রকল্পই আর্থিক করিডরের মর্যাদা পাচ্ছে এবং সেগুলিতে চার লেনের (৭০-৯০ মিটার চওড়া) সড়ক তৈরি করা হবে। ফলে জমির ব্যবস্থা করা রাজ্যের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে খড়্গপুর-মোড়গ্রামের জন্য জমি জোগাড়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সড়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সব কেন্দ্রীয় প্রকল্প রাজ্য সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তিনটি বড় পরিকাঠামো প্রকল্পের প্রায় পুরো টাকাই দেবে কেন্দ্র। ফলে জমির ব্যবস্থা করতে আগের মতো আর গড়িমসি হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

বারাণসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিকল্পনা অনেক দিন আগেই করেছিল কেন্দ্র। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাগনানে ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক (বম্বে রোড, এখনকার পরিচিতি জাতীয় সড়ক-১৬)-এর সঙ্গে মেশার কথা ছিল সেই এক্সপ্রেসওয়ের। এ রাজ্যের যুক্তি ছিল, বম্বে রোডে মিশলে সেখান থেকে কলকাতামুখী যান চলাচল সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। সেই যুক্তিতেই হুগলি নদীর উপরে আর একটি সেতুর প্রস্তাব দিয়েছিল রাজ্য। চাহিদার বাস্তবতা বুঝে সেই প্রস্তাবে আপত্তি করেনি কেন্দ্র। অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকই মনে করছেন, কেন্দ্রের সঙ্গে ‘লড়াই’ বজায় রেখে আখেরে লাভ নেই রাজ্যের। কারণ, রাজ্যের কোষাগারের হাল বেশ খারাপ। প্রবল আর্থিক বোঝা নিয়ে রাজ্যের পক্ষে একক ভাবে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিপুল বরাদ্দ করা কার্যত অসম্ভব।

এখনকার পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রায় ৬২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বারাণসী-কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে পুরুলিয়া দিয়ে বঙ্গে ঢুকবে। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া-পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, গড়বেতা দিয়ে বম্বে রোডে উলুবেড়িয়া-বাগনান হয়ে আসবে কলকাতার দিকে। কলকাতার সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়েটিকে যুক্ত করতে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর দক্ষিণে বাটানগর-বজবজ-পুজালি বা বন্দরের কাছাকাছি সুবিধাজনক কোনও এলাকায় নতুন সেতু তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্য সরকার।

প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, প্রাথমিক ভাবে সেই প্রস্তাবে কেন্দ্রের আপত্তি নেই। সে-ক্ষেত্রে হুগলি নদী পেরিয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি যুক্ত হবে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক (ডায়মন্ড হারবার রোড)-এর সঙ্গে। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “কেন্দ্র প্রাথমিক সম্মতি দেওয়ায় এ বার সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হবে। তার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেবে কেন্দ্র। এ রাজ্যে নতুন সড়কের দৈর্ঘ্য হবে ২৭৫-২৯০ কিলোমিটার। এই প্রকল্পে রাজ্যে খরচ হবে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।”

সড়ক বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এখন বম্বে রোড এবং দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের গাড়ি একমাত্র কোনা একপ্রেসওয়ে দিয়ে কলকাতায় যাতায়াত করে। সেখানে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রবল যানজটে মানুষকে নাকাল হতে হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে বিকল্প সড়ক পরিকাঠামো তৈরি না-হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। নতুন প্রকল্প রূপায়িত হলে কলকাতা থেকে বম্বে রোডে যাতায়াত করা গাড়িকে আর কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে হবে না। এতে সময় আর খরচ দু’টিই কমবে। কমবে যানজটও। এক কর্তার কথায়, “ইতিমধ্যে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে এলিভেটেড বা উড়ালপথ পরিকাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। তাতে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে। সেটির সঙ্গে নতুন প্রকল্প মানুষকে অনেক বেশি স্বস্তি দেবে।”

আরও পড়ুন
Advertisement