(বাঁ দিক থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, শাহজাহান শেখ এবং কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করতে পারবে রাজ্যের পুলিশ। কোনও স্থগিতাদেশ তাতে দেওয়া হয়নি। জানালেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম।
সোমবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘স্পষ্ট ভাবে বলছি, পুলিশকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ইডির মামলায় সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। আমরা পুলিশকে বলিনি যে, গ্রেফতার করা যাবে না।’’
শাহজাহানকে মামলায় যুক্ত করে নোটিস জারি করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারকে সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা এবং ইংরেজি সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে নোটিস জারি করতে হবে বলে জানান প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি ইডি, সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশকেও মামলায় যুক্ত করতে বলা হয়েছে। আগামী ৪ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, শাহজাহানের গ্রেফতারির ক্ষেত্রে অন্তরায় আদালত। কোর্টই পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। অভিষেক বলেন, ‘‘শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। ইডি তাঁকে ধরতে পারেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গিয়ে রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। ফলে পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে আদালতই।’’ শাহজাহানকে গ্রেফতারের বিষয়ে অভিষেক সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের উল্লেখও করেছিলেন। তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ বলেছিলেন, ‘‘সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনকে কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার করে এনেছিল এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধেও দল ব্যবস্থা নিয়েছে। তা হলে শাহজাহানকে গ্রেফতার না করার কী আছে! সন্দেশখালির দুই তৃণমূল নেতা শিবু হাজরা এবং উত্তম সর্দারকেও গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। তা হলে শাহজাহানকে পারবে না কেন!’’
রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও গত শনিবার দাবি করেছিলেন, আদালতের কারণেই পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারছে না। কারণ, ইডির সওয়ালের ভিত্তিতে আদালত রাজ্য পুলিশের এফআইআরে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
সোমবার সন্দেশখালি সংক্রান্ত মামলায় সেই প্রসঙ্গ ওঠে। তাতেই প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন,আদালত শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে কোনও বাধা দেয়নি। পুলিশকে বলা হয়নি, ওই নেতাকে গ্রেফতার করা যাবে না। রাজ্য পুলিশ চাইলেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারবে।
সোমবার আদালতে প্রধান বিচারপতি এবং আইনজীবীদের কথোপকথন নীচে তুলে ধরা হল—
বিচারপতি: শুনলাম শাহজাহান শেখের আগাম জামিনের মামলা পিছিয়ে গিয়েছে। উনি তো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কী ভাবে ওঁকে গ্রেফতার করা হবে?
আদালত বান্ধব: এক সাংসদ বলছেন, আদালতের নির্দেশের কারণেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। আদালত এফআইআরে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
বিচারপতি: কোন নির্দেশে স্থগিতাদেশ?
রাজ্যের আইনজীবী: ইডির উপর আক্রমণের ঘটনায় রাজ্য পুলিশ তিনটি এফআইআর করেছিল। আদালত তাতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।
বিচারপতি: স্পষ্ট করে বলছি, পুলিশকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। ইডির মামলায় সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। আমরা পুলিশকে বলিনি, শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যাবে না।