West Bengal Panchayat Election 2023

ভোটে জেতা যেন পাঁচ বছরের চাকরি, তাই কি এত দ্বন্দ্ব? ব্যালট পেপারের মামলায় প্রশ্ন বিচারপতির

জাঙ্গিপাড়ার একটি গণনাকেন্দ্রের বাইরে রাস্তা থেকে কয়েকশো অব্যবহৃত ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়েছে। সেই মামলায় আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার হাজিরা দেন জাঙ্গিপাড়ার বিডিও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ১৫:৩৯
Calcutta High Court justice Amrita Sinha questions Election Commission on ballot paper case.

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। ফাইল চিত্র।

হুগলির জাঙ্গিপাড়ায় ভোটগণনার দিন গণনাকেন্দ্রের বাইরে রাস্তায় ব্যালট পেপার পড়ে থাকার মামলায় কমিশনকে ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি অমৃতা সিংহের পর্যবেক্ষণ, ভোটে জেতার অর্থ যেন পাঁচ বছরের চাকরি পাওয়া। সেই কারণেই এত দ্বন্দ্ব হচ্ছে রাজ্য জুড়ে। কমিশনের উপর আদালত ধৈর্য ধরে অনেক আস্থা রেখেছে বলেও জানান তিনি।

মঙ্গলবার পঞ্চায়েত ভোটের গণনার দিন জাঙ্গিপাড়ার ডিএন হাই স্কুলের পাশের রাস্তায় গুচ্ছ গুচ্ছ ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়। এক সিপিএম প্রার্থী কয়েকশো ব্যালট পেপার নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলায় জাঙ্গিপাড়ার বিডিওকে তলব করা হয়েছিল। তিনি বৃহস্পতিবার বিচারপতি সিংহের এজলাসে সশরীরে হাজিরা দেন। তাঁকে ব্যালট পেপার রাস্তায় পড়ে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিডিও জানান, তিনি প্রিসাইডিং অফিসারকে ব্যালট পেপারগুলি দিয়েছিলেন। তার পর আর সেগুলি তাঁর দায়িত্বে ছিল না। এর পর বিডিও-কে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারের নাম, ঠিকানা লিখে দিয়ে যেতে বলেন বিচারপতি।

Advertisement

রাস্তা থেকে উদ্ধার করা ব্যালট পেপারগুলি ছিল অব্যবহৃত। তবে তাতে প্রিসাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর ছিল। বিচারপতি সিংহ বিডিওকে প্রশ্ন করেন, কী ভাবে সেগুলি গণনাকেন্দ্রের বাইরে এল? সেগুলির যে অপব্যবহার করা হয়নি, তা বিডিও কী ভাবে নিশ্চিত করবেন? জানতে চান বিচারপতি।

হাই কোর্টে ব্যালট পেপার সংক্রান্ত মামলাটি করেছেন মহম্মদ শাহিন শেখ। তাঁর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে জানান, এই ব্যালট পেপারগুলি ভুয়ো হতে পারে। হয়তো ভুয়ো ব্যালটেই অবাধে ছাপ্পা ভোট হয়েছে। এ ভাবে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঠাট্টায় পরিণত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কমিশনের আইনজীবী জানান, ভোট মিটে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে এ বার নির্বাচনী পিটিশন দাখিল করা উচিত। হাই কোর্টে এই মামলা গৃহীত হওয়াই উচিত নয়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশনকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি সিংহ। তিনি জানান, মামলা গ্রহণ করার বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘কেন ভোটের পরেও রাজ্যে এত অশান্তি হচ্ছে? রাজ্যের সাধারণ মানুষ হিসাবে আপনি বলুন, এখনও পর্যন্ত ক’টি নির্বাচনী পিটিশনের সুরাহা হয়েছে? তার খরচ কে জোগাবে?’’

বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, নির্বাচনে জেতাকে কেউ কেউ পাঁচ বছরের চাকরি বলে মনে করছেন। এটাই তাঁদের টাকা উপার্জনের মাধ্যম। সেই কারণেই চার দিকে এত দ্বন্দ্ব হচ্ছে। কিন্তু এটা কোনও চাকরি নয়।

ব্যালট পেপার সংক্রান্ত মামলাটিতে বিচারপতি আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে চাওয়া হয়েছে ওই গণনাকেন্দ্রের অন্দরের এবং বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ। ২০ তারিখের মধ্যে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে তা জমা দিতে হবে। সেখানেই সেগুলি সংরক্ষিত থাকবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৪ জুলাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement