Calcutta High Court

দু’লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছেন এএসআই! আইনের সঠিক ধারা জানে না পুলিশই, ভর্ৎসনা হাই কোর্টের

জমি বিবাদের একটি মামলায় বাগুইআটি থানার এএসআই ঘুষ চেয়েছেন বলে অভিযোগ। পূর্ব বর্ধমানে পুলিশের মদতে বেআইনি ভাবে ভাড়াটিয়াদের তুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই মামলায় পুলিশকে ভর্ৎসনা আদালতের।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:০২
পর পর দু’টি মামলায় পুলিশকে ভর্ৎসনা কলকাতা হাই কোর্টের।

পর পর দু’টি মামলায় পুলিশকে ভর্ৎসনা কলকাতা হাই কোর্টের। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

দু’লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছেন খোদ থানার এএসআই! আদালতে গিয়ে এমনটাই অভিযোগ করলেন রাজারহাট গোপালপুরের এক বাসিন্দা। জমি বিবাদের একটি মামলায় পুলিশের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বাগুইআটি থানার এএসআইয়ের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কলকাতা হাই কোর্ট। পুলিশকে ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। একই সঙ্গে পৃথক একটি ঘটনায় পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার ভূমিকার সমালোচনাও করেছেন তিনি।

Advertisement

রাজারহাট গোপালপুরের বাসিন্দা ইমাদুল বিশ্বাস পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি জানিয়েছেন, জমি সংক্রান্ত বিবাদের সমাধান খুঁজতে তিনি থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে তাঁকে অযথা হেনস্থা করা হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও করেছেন তিনি। বাগুইআটি থানার এএসআই এমডি রেজাউল সুরক্ষা দেওয়ার নাম করে আবেদনকারীর কাছ থেকে দু’লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছেন বলে অভিযোগ। আদালতের পর্যবেক্ষণ, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারাগুলি সঠিক জানেন না এসআই মধুসূদন বাগ। তিনি আবেদনকারীকে দিয়ে ৩৫(৩) ধারায় মুচলেকা লিখিয়ে নিয়েছেন, যা তিনি আইনত করতে পারেন না। বিচারপতি ঘোষ বলেন, ‘‘এক জন এসআই বিএনএসএস ৩৫(৩) ধারায় কী ভাবে মুচলেকা লিখিয়ে নিলেন? কেন থানায় তলব করে তথ্য চাওয়া হল না? তার পরিবর্তে কেন মুচলেকার নোটিস দেওয়া হল?’’

বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অধীনে সমস্ত থানাকে পর্যাপ্ত ধারা প্রয়োগের বিষয় অবগত করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে নোটিসের গঠন নতুন করে তৈরি করতে বলা হয়েছে। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি ঘোষ জানান, জমি বিবাদের কারণে কোনও পক্ষকে যাতে হেনস্থার শিকার হতে না হয়, তা নিশ্চিত করবেন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। আবেদনকারীকে অযথা থানায় তলব করা যাবে না। ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আগামী দিনে পুলিশকে আরও সতর্ক থাকতে হবে, জানিয়েছে আদালত।

পৃথক একটি ঘটনায় পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানা এলাকায় বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে জোর খাটিয়ে ভাড়াটিয়াকে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেখানেও পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি ঘোষ। নিত্যানন্দপুর এলাকায় একটি বাড়ির একাংশ ভাড়া নিয়ে গত ৪০ বছর ধরে দোকান চালাচ্ছিলেন তিন ব্যক্তি। অভিযোগ, এলাকার দুষ্কৃতীদের সাহায্য নিয়ে তাঁদের দোকান থেকে তুলে দেওয়া হয়। তার পর ভেঙে ফেলা হয় বাড়ি। গোটা ঘটনায় পুলিশের মদত ছিল বলেও আদালতে দাবি করেছেন ওই তিন জনের আইনজীবী পিকে ভট্টাচার্য।

বাড়ির মালিকের তরফে জানানো হয়, গত দু’বছর ধরে দোকানের ভাড়া দিচ্ছিলেন না তিন জন। জীর্ণ বাড়িটি প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই ভাঙা হয়েছে। কিন্তু গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে আদালত। বিচারপতি ঘোষের মন্তব্য, ‘‘জীর্ণ বাড়ির অছিলায় প্রোমোটারের কাছে জমি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, বেআইনি ভাবে ভাড়াটিয়াদের তুলে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ তো নিজেকে আদালত ভাবছে। কে দোষী আর কে নির্দোষ, তারাই স্থির করে ফেলছে! এটা মানা হবে না।’’ ভেঙে দেওয়া বাড়িতে আবেদনকারীদের দোকান ঘরের জায়গার পরিমাপ ও মূল্যায়ন বন্ড আকারে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ঘোষ। তা না হলে নতুন নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। আগামী ১৩ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন