গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
শাহজাহান শেখের গ্রামে ইডির উপর হামলার ঘটনার তদন্ত পিছিয়ে গেল এক মাস। এই মামলায় কারা তদন্ত করবে, সিবিআই না রাজ্য, তা নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ইডি এবং রাজ্য দু’পক্ষই। বুধবার সেই মামলা সংক্রান্ত একটি নির্দেশে আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিল হাই কোর্ট। যার ফলে আপাতত সন্দেশখালিকাণ্ডের তদন্ত অন্তত এক মাস পিছিয়ে গেল বলে মনে করছেন আইনজীবী এবং রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল ইডি। সেই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে দ্রুত শুনানির আর্জি জানিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। পাল্টা রাজ্যের দাবি ছিল, তদন্ত রাজ্য পুলিশের হাতেই থাকুক। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর সম্প্রতি হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এই মামলায় তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল বা সিট গঠনের নির্দেশ দেয়। যেখানে সিবিআই এবং রাজ্য দুই পক্ষেরই আধিকারিক থাকবেন। কিন্তু বুধবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিল।
বুধবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ আপাতত স্থগিত থাকবে। কোনও এফআইআরের উপরই তদন্ত করতে পারবে না রাজ্য পুলিশও। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। ৬ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলেও জানায় বেঞ্চ।
ইডি প্রথম থেকেই চেয়েছিল, সন্দেশখালিকাণ্ডের তদন্ত করুক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এই মর্মে তারা কলকাতা হাই কোর্টে আর্জিও জানিয়েছিল। কিন্তু হাই কোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত তাঁর নির্দেশে জানিয়ে দেন, শুধু সিবিআই নয়, এই মামলার তদন্ত করতে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তৈরি করা হবে। সেই সিটের মাথায় থাকবেন সিবিআই এবং রাজ্য, দু’তরফেরই এসপি পদমর্যাদার আধিকারিক। এ ছাড়া দু’পক্ষেরই সমান সংখ্যক সদস্য সিটে থাকবে বলে জানিয়েছিল আদালত। বিচারপতি এ-ও জানিয়েছিলেন আদালতের নজরদারিতে এই তদন্ত হবে। কিন্তু বিচারপতির সেই নির্দেশ মনঃপূত হয়নি কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডির।
সম্প্রতি তারা এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দ্বারস্থ হয় এবং জরুরি ভিত্তিতে ওই মামলার শুনানির আর্জি জানায়। বুধবার ইডির সেই আবেদনেরই শুনানি হয় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে।
অন্য দিকে, সন্দেশখালির তদন্ত নিয়ে প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্যও। তাদের দাবি ছিল, সন্দেশখালির তদন্ত রাজ্যের হাতেই থাকুক। অর্থাৎ, পুলিশকেই এর তদন্তভার দেওয়া হোক। তারাই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। বুধবার এই দু’টি মামলারই একসঙ্গে শুনানি হওয়ার কথা ছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু প্রধান বিচারপতি কোনও পক্ষেরই দাবি মানেননি। তিনি জানিয়ে দেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত শুনানির প্রয়োজন আছে। এক মাস পর আবার এই মামলার শুনানি হবে। তার আগে সিট গঠন আপাতত হচ্ছে না। সন্দেশখালিকাণ্ডে কোনও এফআইআরের তদন্ত রাজ্য পুলিশও করতে পারবে না।
রেশন ‘দুর্নীতি’র তদন্তে এক মাস আগে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তাঁর গ্রাম সরবেরিয়ায় আক্রান্ত হন ইডির আধিকারিকেরা। শাহজাহানের বাড়ির সামনেই প্রায় হাজারখানেক গ্রামবাসী ঘিরে ধরেন ইডির দলটিকে। ইডির সঙ্গে ছিল সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী। সে সবের পরোয়া না করেই ইট, পাথর, বাঁশের লাঠি নিয়ে গ্রামবাসীরা চড়াও হন তাঁদের উপর। ঘটনাস্থল থেকে কোনওক্রমে প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে আসে ইডির দলটি। তত ক্ষণে ইডির তিন আধিকারিক গুরুতর জখম হয়েছেন। কলকাতায় ফিরে হাসপাতালেও ভর্তি করাতে হয় তাঁদের।
এই ঘটনার নিন্দায় সরব হন রাজ্যের বিরোধী দল থেকে শুরু করে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কলকাতায় এসে বিশেষ বৈঠক করেন ইডির শীর্ষকর্তাও। গত ৫ জানুয়ারি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই ইডির তরফে এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা দায়ের করা হয় কলকাতা হাই কোর্টে।