বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
ঝড়-বিধ্বস্ত জলপাইগুড়ির উদ্দেশে সোমবার সকালেই রওনা দেনবিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বেলা ১টা নাগাদ তিনি পৌঁছেছেন বাগডোগরায়। যাওয়ার আগে রাতে তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জলপাইগুড়িতে পৌঁছে যাওয়া নিয়েও কটাক্ষ করেছেন।
জলপাইগুড়ির ঝড়ে প্রাণহানির খবর পেয়ে রবিবার রাতেই সেখানে পৌঁছে যান মমতা। মৃতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ নেন। রাত আড়াইটে পর্যন্ত জলপাইগুড়ির বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা রবিবার রাত সাড়ে ৯টার পর চার্টার্ড ফ্লাইটে জলপাইগুড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। আর শুভেন্দু বিমানবন্দর থেকে রওনা দিয়েছেন সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ। অর্থাৎ, তাঁদের যাত্রার সময়ের ব্যবধান প্রায় ১৩ ঘণ্টা। এ প্রসঙ্গে সোমবার সকালে বিমানবন্দর থেকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘ওঁর চার্টার্ড ফ্লাইট আছে, তাই উনি রাতে চলে গিয়েছেন। আমাদের সাধারণ বিমান, যখন সময় হবে, আমি যাব। রাজ্যপালও তেমন গিয়েছেন।’’ মমতার দ্রুত যাওয়া নিয়ে নির্বাচনী বন্ডের প্রসঙ্গও তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল তো নির্বাচনী বন্ড থেকে অনেক টাকা পেয়েছে। সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছে। ডিয়ার লটারি দিয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। ভোররাতে, মাঝরাতে যখন খুশি চার্টার্ড ফ্লাইটে ওঁরা যেতে পারেন। তবে আমি তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে চাই, মাল নদীতে হড়পা বানের সময়ে যদি ওঁর এই তৎপরতা দেখতে পেতাম, তা হলে ভাল লাগত। তা হলে বুঝতাম আপনি রাজধর্ম করছেন, ভোটধর্ম করছেন না।’’
শুভেন্দু জানান, এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে। কারণ রাজনৈতিক কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা এই মুহূর্তে নির্বাচনী বিধির আওতায় পড়ছেন। তাই ইচ্ছা থাকলেও বিশেষ কিছু তাঁরা করতে পারবেন না। শুভেন্দু বলেন, ‘‘কাল থেকে ওখানে আমাদের স্বেচ্ছাসেবী এবং জেলার কর্মীরা কাজ করছেন। নির্বাচনী বিধি মাথায় রেখে আমাদের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো কাজ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর দ্রুততার সঙ্গে হস্তক্ষেপ করেছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারের পাশাপাশি ত্রাণকাজও চালিয়েছে। জলপাইগুড়িতে প্রায় ৮০০ বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বাড়িগুলি টিন দিয়ে তৈরি ছিল। এই সময়ে সরকারের উচিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কারণ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে সরকার আদর্শ আচরণবিধির আওতায় পড়ে না। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, রেড ক্রসের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও জলপাইগুড়িতে কাজ করছে। তাদের আরও বেশি করে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা রাজনৈতিক কর্মী বা জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনী বিধির কারণে বেশি কিছু করতে পারব না। ইচ্ছা থাকলেও আমাদের উপায় নেই। কেবল পাশে থাকতে পারি। তাই সংগঠনগুলিকে দায়িত্ব নিতে হবে। আশা করব অন্য রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসন রাজনীতি দূরে রেখে কাজ করবে।’’
শুভেন্দুর মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন বলেন, ‘‘কে চার্টার্ড ফ্লাইটের কথা বলছেন? কারা চার্টার্ড ফ্লাইটে নেতাদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে যোগদান করাল? আর শুভেন্দু নির্বাচনী বন্ডের কথা কী ভাবে বলছেন? দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলার সীতারামনের স্বামীই তো কিছু দিন আগে বলেছেন নির্বাচনী বন্ড পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুর্নীতি।’’
বস্তুত, ভোটের প্রচারে এমনিতেই সোমবার উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা ছিল শুভেন্দুর। কোচবিহারে তাঁর দু’টি সভা রয়েছে। বিকেল ৩টে নাগাদ বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের সমর্থনে শীতলখুচিতে এবং পরে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গার সমর্থনে তুফানগঞ্জে সভা করার কথা তাঁর। শুভেন্দু জলপাইগুড়িতে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর ওই দু’টি সভা করবেন কি না,তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বাগডোগরায় নেমে শুভেন্দু আর এক প্রস্থ কটাক্ষ করেন মমতাকে। বলেন, ‘‘রাতে কী কাজ? ওঁর এত তাড়াহুড়ো করার কী ছিল? মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করা, হাসপাতালে যাওয়া— এগুলো তো উনি সকালেও করতে পারতেন, যেমন রাজ্যপাল করেছেন। দুর্গাপুজোর সময়ে মালবাজারে যা হল, তখন উনি কোথায় ছিলেন?’’