Suvendu Adhikari

অভিষেকের মোকাবিলায় দিল্লির ময়দানে শুভেন্দুকেও নামাল বিজেপি! নানা দিক থেকে নিশানাও অব্যাহত

দিল্লিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লিতে তৃণমূলের কর্মসূচির মধ্যেই সরব হলেন শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলকে আক্রমণ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওটা গুন্ডাদের দল।’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৩৭
photo of Abhishek Banerjee and Suvendu Adhikari

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী (বাঁ দিক থেকে)। —ফাইল চিত্র।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লিতে তৃণমূলের কর্মসূচির পাল্টা মোকাবিলা করতে এ বার শুভেন্দু অধিকারীকে মাঠে নামাল বিজেপি। শুভেন্দুর তৃণমূল-ত্যাগের পর থেকেই অভিষেকের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌‌যুদ্ধ চলছে রাজনীতির ময়দানে। এ বার সেই ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ অভিষেকের বাণ সামলাতে শুভেন্দুকে দিল্লিতে এনে আসরে নামাল পদ্মশিবির। অভিষেক বাহিনীকে আক্রমণ করতে শুভেন্দুকে দিল্লিতে এনে তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পদ্মশিবির পাল্টা আক্রমণের কৌশল রচনা করল বলেই মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে নিজস্ব ভঙ্গিমাতেই তৃণমূলকে বিঁধলেন শুভেন্দু। বললেন, ‘‘তৃণমূলের তিনটি অ্যাজেন্ডা রয়েছে। পরিবারবাদ, দুর্নীতি এবং তুষ্টিকরণ— এই তিন অ্যাজেন্ডায় চলে এই দল। গুন্ডাদের দল। উন্নয়ন করে না।’’ এর আগে, সকালে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। সোমবারও সরব হয়েছিলেন অনুরাগ। পাশাপাশি, সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ, বাংলার সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে শুভেন্দুর সাংবাদিক বৈঠক এই পর্বে আলাদা নজর কেড়েছে।

Advertisement

ঠিক ছিল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় সাংবাদিক বৈঠক করবেন শুভেন্দু। দুপুর ১টায় যন্তর মন্তরে বকেয়া আদায়ের দাবিতে তৃণমূলের অবস্থান কর্মসূচি। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পর সাংবাদিক বৈঠক শুরু করেন শুভেন্দু। তত ক্ষণে যন্তর মন্তরে অবস্থানে বসেছেন তৃণমূলের নেতারা। যোগ দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই সময়ই দিল্লির বুকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ তুলে সরব হলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করার কথা শুভেন্দুর। তার আগে বিকেল ৪টেয় কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ওই বৈঠকেই বাংলায় একশো দিনের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাবেন শুভেন্দু। এ কথা সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে সোমবারই সিবিআই তদন্তের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দিল্লিতে গিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হলেন শুভেন্দু। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলকে আক্রমণ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে দেশে। তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। বিকেলে মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সঙ্গে দেখা করে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাব।’’ একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনায় বকেয়া আদায়ের দাবিতে সোমবার থেকে দিল্লিতে দু’দিনের কর্মসূচি করছে তৃণমূল। তার মধ্যেই দিল্লি গিয়ে একশো দিনের প্রকল্পে বাংলায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যে ভাবে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হলেন শুভেন্দু, তা এই পর্বে আলাদা মাত্রা যোগ করল। শুভেন্দু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বিহার থেকে জানিয়েছেন, এটা বড় দুর্নীতি হয়েছে। প্রয়োজনে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করাব।’’ কয়লা পাচার, গরু পাচার, নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে বাংলায় তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এই আবহে একশো দিনের প্রকল্পেও সিবিআই তদন্ত করানো হতে পারে বলে সোমবারই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন গিরিরাজ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘মনরেগাতে (১০০ দিনের প্রকল্প) পশ্চিমবঙ্গে ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব কার্ড তৈরি করে কোটি কোটি সরকারি টাকা বেহাত হয়ে যাচ্ছিল। আধার সংযুক্তিকরণের সময় তা ধরা পড়েছে...এটা চলতে পারে না। মনে হচ্ছে সিবিআই তদন্তের সময় এসে গিয়েছে।’’ তার পরের দিনই তড়িঘড়ি দিল্লিতে গিয়ে এই নিয়ে তদন্তের দাবিতে সরব হলেন শুভেন্দু।

এই প্রসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘এটা অনেক বড় কেলেঙ্কারি। এক কোটি ৩২ লক্ষের বেশি ভুয়ো জবকার্ড বাতিল হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা তৃণমূল নেতাদের পকেটে গিয়েছে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি এটা।’’ একশো দিনের কাজের প্রকল্পের পাশাপাশি আবাস যোজনাতেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা টাকা আটকাইনি। চুরি আটকেছি।’’ ভুয়ো জবকার্ড এবং আসল জবকার্ড চিহ্নিত করে চোরেদের জেলে ভরার দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। সিবিআই তদন্ত প্রসঙ্গে সোমবার অভিষেক চ্যালেঞ্জের সুরে জানিয়েছিলেন যে, সিবিআই তদন্ত হলে যদি মানুষ টাকা পায়, তা হলে তিনি এই তদন্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

দিল্লিতে তৃণমূলের কর্মসূচিকেও কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। বলেছেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের আগে জনসমর্থন ফেরাতে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছে। নাটক করছে। ওরা গুন্ডাদের দল।’’ দুর্নীতি প্রসঙ্গে তৃণমূলকে বিঁধতে গিয়ে কংগ্রেস, সিপিএমকেও আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। বলেছেন, ‘‘২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সিপিএম, কংগ্রেস সেটিং বিরোধী ছিল। তাই এত দুর্নীতি করেছে মমতা সরকার।’’ বিধানসভার ভিতর এবং বাইরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন শুভেন্দু। মঙ্গলবার কলকাতায় বিধানসভার বাইরে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল, শঙ্কর ঘোষেরা। অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘অভিষেক দিল্লিতে গিয়েছেন নাটক করতে। আপনার দল চুরি করেছে। হিসাব দিন টাকা পাবেন।’’

গান্ধীজয়ন্তীর দিন দিল্লিতে তৃণমূলের কর্মসূচির প্রথম দিনেও পাল্টা ব্যাট করতে একাধিক সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন বিজেপি নেতারা। তালিকায় ছিলেন গিরিরাজ সিংহ, অনুরাগ ঠাকুর, সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। মঙ্গলবার মাঠে নামানো হল শুভেন্দুকে। বিজেপির এই ‘সক্রিয়তা’র নেপথ্যে তৃণমূলের রাজনৈতিক জয় দেখছে তৃণমূল। সোমবার দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘এটাই তৃণমূলের সাফল্য। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার দাবিতে দিল্লি কাঁপিয়ে দিচ্ছে, আর বিজেপি নেতাদের দিল্লি উড়ে আসতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের নিয়ে বাংলার দিল্লি অভিযান সর্বভারতীয় রাজনীতিতে গভীর ছাপ ফেলেছে। বিজেপি কোণঠাসা হচ্ছে। তাই বাংলার অপদার্থ বিজেপি নেতাদের দিল্লি উড়িয়ে এনে ভুল, মিথ্যা বিবৃতি দেওয়াতে হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement