শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দোপাধ্যায়।
এর আগে নিজের দল বিজেপি-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তাঁকে বিজেপি-তে নিয়ে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ শানালেন রাজীব। ‘বিরোধী নেতাকে বলব...’ শীর্ষক আক্রমণে রাজীব অবশ্য তাঁর একদা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন। সেটা বিজেপি-র বিরোধিতা করা আগের পোস্টেও ছিল। এটা দেখেই রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘উনি তৃণমূলে ফিরতে চান। কিন্তু নিচ্ছে না। এই সব করে পুরনো দলে নম্বর বাড়াতে চাইছেন।’’
তৃণমূল ত্যাগের আগে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন রাজীব। বিধানসভা ছেড়েছিলেন মমতার ছবি হাতে নিয়ে। চোখে জল ছিল সে দিন। এখন ডোমজুড়ে বিজেপি-র টিকিটে হারার পরেও যেন মমতার কথা বলে চোখে জল রাজীবের। আগের পোস্টটির মতো এ বারেও মুখ্যমন্ত্রীকে কেন আক্রমণ করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘‘যাঁর নেতৃত্বে এবং যাঁকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়ে বাংলার মানুষ ২১৩ আসনে তাঁর প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, সেই মুখ্যমন্ত্রীকে অযথা আক্রমণ না করে সাধারণ মানুষের দুর্দশা মুক্তির জন্য পেট্রল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের মূল্য হ্রাস করাই এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তৃণমূল সরব তখন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু দাবি করেন, পেট্রোলের দামের মধ্যে ৩৮ টাকাই নিচ্ছে রাজ্য সরকার। এই পরিস্থিতিতে ‘পুরনো নেত্রী’-র পাশে থাকার বার্তা দিয়ে নেটমাধ্যমে সরাসরি শুভেন্দুকে আক্রমণ করলেন প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব।
বুধবারই বিধানসভায় পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করেছে রাজ্য সরকার। তার পরই সাংবাদিক বৈঠক করে বাজেটের সমালোচনার পাশাপাশি পেট্রল, ডিজেলের দাম নিয়ে মমতার সরকারকেই আক্রমণ করেন শুভেন্দু। তার পরেই ফেসবুক ও টুইটারে সরব হন রাজীব।
বুধবার কলকাতায় পেট্রলের দাম লিটার প্রতি ৩৯ পয়সা বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা ২৩ পয়সা। অন্য দিকে, ডিজেলের দামও সেঞ্চুরির পথে। বুধবার প্রতি লিটারে ২৩ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা। এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় কর কমানোরও আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই প্রসঙ্গেই বুধবার রাজ্য বাজেট পেশের পরে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রলের দাম ঠিক করে না। তৃণমূলই এ সব প্রচার করবে। রাজ্য ২০ টাকা ছাড় দিলে অভিনন্দন জানিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব আনব। বিধায়কদের নিয়ে দিল্লি যাব।’’ রাজীবের আক্রমণ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘আমি এ সব বিষয়কে পাত্তা দিই না।’’
রাজীব বেসুরো হয়েছেন অনেক আগেই। বিধানসভা নির্বাচনে হারের পর থেকে বিজেপি-র সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় তাঁর। শোনা যায় তিনি তৃণমূলে ফিরতে চান। শাসক দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের সঙ্গে বৈঠকও করেন। যদিও দু’জনেই সেটাকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলেছিলেন। আর মুকুল রায় তৃণমূলে ফেরার পরেই রাজীব সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘এই বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা একটা সরকারের এক মাস হয়েছে। সেখানে যদি কেউ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে চায় বা গোঁড়া সাম্প্রদায়িকতা দেখাতে চায় বা যদি সত্যিকারের ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করতে চায়, তবে আমি সেই দলে থেকেও বিরোধিতা করব। আগামী দিনেও বিরোধী থাকব।’ তবে রাজীব এখনও বিজেপি-তে আছেন কিনা তা নিয়েই সন্দিহান গেরুয়া শিবির। দলের কোনও বৈঠকেই ইদানীং তাঁকে দেখা যায়নি। বুধবার রাজীব যে পোস্ট করেছেন তা নিয়ে বিজেপি-র পক্ষে রাজ্য স্তরের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘উনি দলে রয়েছেন কিনা সেটাই জানা নেই। তাই মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে পোস্ট দেখেই স্পষ্ট তৃণমূল নিতে চাইছে না বলেই উনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুশি করতে চাইছেন।’’