West Bengal Panchayat Election 2023

ভুল করে মনোনয়ন জমা দিয়ে ফেলেছি, তাই তুলে নিতে এলাম! প্রার্থিতালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে মঙ্গলবারেই

সোমবার দিনভর অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি লেগে রইল। কোথাও প্রকাশ্যে এল শাসক আর বিরোধীর বিবাদ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৩ ০৩:৩৮
Image of political violence

পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে সোমবারও রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি লেগে রইল। —ফাইল চিত্র।

মনোনয়ন যদিও বা জমা করা গিয়েছে, কিন্তু প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে তৃণমূল! এমনটাই অভিযোগ করছে বিজেপি। তাদের এ-ও অভিযোগ, বাড়ি বাড়ি ঘুরে তা নিয়ে প্রার্থীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল যদিও এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সোমবার দিনভর এই সব অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি লেগে রইল। কোথাও প্রকাশ্যে এল শাসক আর বিরোধীর বিবাদ। আক্রান্ত হলেন প্রার্থী, তাঁদের আত্মীয় থেকে শুরু করে নিরীহ শিশুরাও। কোথাও প্রকাশ্যে এল শাসকদলের অন্তর্ঘাত। এমনকি, এক প্রার্থীকে বিডিও অফিসে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারও করানোর অভিযোগও উঠল। মনোনয়ন প্রত্যাহারের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সোমবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর।

সোমবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামও। সেখানে দলীয় কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। জোড়াফুলের প্রতীকে একই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন একাধিক প্রার্থী। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে মমতার নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের আত্মীয় শেখ হবিবুল দাবি করেছেন, দলের প্রতীকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরেও নতুন প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁতেও প্রকাশ্যে এসেছে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ছবি। সেখানে একই আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন দলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতির ছেলে এবং চেয়ারম্যান। শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। বিষয়টিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।

Advertisement

অন্য দিকে, কোচবিহারের দিনহাটাতে তৃণমূলের এক প্রার্থীর স্বামী গুলিবিদ্ধ হন। তিনি হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনায় আঙুল উঠেছে বিজেপির দিকে। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন সিপিএমের এক প্রার্থীর দাদা। মালদহের ইংরেজবাজারে বিজেপির এক প্রার্থীর ভাইকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। ভোটের আবহে বল ভেবে বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে মুর্শিদাবাদে জখম হল পাঁচ শিশু। মনোনয়ন পর্বে সব থেকে বেশি উত্তপ্ত ছিল যে ভাঙড়, সেখানে সোমবার আরাবুল ইসলাম এবং তাঁর ছেলে-সহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। অভিযোগ, আইএসএফ কর্মীকে খুন।

এ সবের মধ্যেই মনোনয়নের স্ক্রুটিনির রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। শনিবার ছিল স্ক্রুটিনি। রবিবার সেই রিপোর্ট রাজ্য নির্বাচন কমিশনে জমা পড়ে। প্রথমে কত মনোনয়ন জমা পড়েছিল, তার মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে কতগুলি, তা জানা গিয়েছে সোমবার।

‘স্বেচ্ছা’য় মনোনয়ন প্রত্যাহার

মনোনয়ন পর্বে রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। তবে দক্ষিণ দিনাজপুরে অশান্তি তুলনামূলক ভাবে কম হয়। তার পরেও জেলার সব পঞ্চায়েত আসনে প্র্রার্থী দিতে পারেনি বিরোধীরা। তা নিয়ে কটাক্ষ করে তৃণমূল। সোমবার সেই জেলাতেই জোর করে এক বিজেপি প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর অভিযোগ উঠল। তা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিজেপির অভিযোগ, ভয় দেখিয়ে তাদের প্রার্থীকে পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াতে দিচ্ছে না তৃণমূল। ওই প্রার্থীকে বিডিও অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। জানা গিয়েছে, খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁরা বাধা দিলে শুরু হয় গন্ডগোল। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিডিও অফিসেই হাতাহাতিতে জড়ান দুই দলের কর্মী-সমর্থকেরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। দীনবন্ধু সরকার নামে ওই বিজেপি প্রার্থী শেষ পর্যন্ত তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তবে তাঁকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে বলে তিনি গঙ্গারামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী জানান, বিভিন্ন জায়গায় দলীয় প্রার্থীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। ভাঙচুর করা হচ্ছে বাড়িঘর। যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি মৃণাল সরকার জানান, দীনবন্ধুকে ভুল বুঝিয়ে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। তিনি নন্দনপুর এলাকায় তৃণমূলের এক সক্রিয় কর্মীর আত্মীয়। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তাই স্বেচ্ছায় নিজের প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করতে চান। দীনবন্ধুর ঘনিষ্ঠদেরও একই দাবি। আনন্দবাজার অনলাইনকেও দীনবন্ধু জানান, তিনি স্বেচ্ছায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।

মনোনয়ন স্ক্রুটিনির রিপোর্ট

শনিবার মনোনয়নের স্ক্রুটিনি করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে রবিবার। সারা রাজ্যে জেলা পরিষদে জমা পড়েছিল ৪,৯৩২টি মনোনয়ন। তার মধ্যে ৪,৮৩০টি চূড়ান্ত হয়েছে। তার মধ্যে বিজেপির ১,০৩১, তৃণমূলের ১,০৬৪, সিপিএমের ৭৯৫, কংগ্রেসের ৭৩৪ এবং অন্যান্য ৬১৫টি। পঞ্চায়েত সমিতিতে জমা পড়েছিল মোট ৩৫,৩৫৩টি মনোনয়ন। তার মধ্যে বাছাই করা হয়েছে ৩৪,৮৬৬টি। তার মধ্যে বিজেপির ৮,৬৯২, তৃণমূলের ১১,৫৫৯, সিপিএমের ৭,২৩০, কংগ্রেসের ২,৭৮৭ এবং বিএসপির ৮০টি মনোনয়ন বাছাই করা হয়েছে। অন্যান্য ১,৫৩৩টি মনোনয়ন বাছাই করা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতে জমা পড়েছিল ১,৯১,০৩৭টি মনোনয়ন। স্ক্রুটিনির পর ১,৮৮,৪৬২টি মনোনয়ন বাছাই করা হয়েছে। তার মধ্যে বিজেপির ৪৪,১২১, সিপিএমের ৩৮,২৯১, কংগ্রেসের ১৩,৯৫৬, তৃণমূলের ৭১,০২৩ এবং বিএসপির ১৩১টি মনোনয়ন বাছাই করা হয়েছে। অন্যান্য ৬,৯৩৪টি মনোনয়ন বাছাই করা হয়েছে। বাকিগুলি বাতিল হয়েছে।

সিপিএম প্রার্থীর দাদা আক্রান্ত

সিপিএমের এক প্রার্থীর দাদার উপর চড়াও হয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া-১ ব্লকের কৈথন গ্রামের ঘটনা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। অভিযোগ, রবিবার সন্ধ্যায় সিপিএম প্রার্থী সইফুল শেখ এবং তাঁর ভাই আমির শেখের বাড়িতে আচমকা কয়েক জন রড, লাঠি, বাঁশ নিয়ে চড়াও হন। অশান্তিতে তাঁদের দাদা মুন্না শেখের মাথা ফেটে যায়। সইফুল এবং আমিরের দাবি, মনোনয়ন তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। আহত মুন্না কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর মাথায় সেলাই পড়েছে। এই ঘটনায় থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে জানা গিয়েছে। তবে সিপিএমের দাবি, তারা গোটা বিষয়টি জেলাশাসককে লিখিত ভাবে জানিয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়ঙ্কা শ্রিংলা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। সিপিএমের পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন জানিয়েছেন, জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের জন্য তৃণমূলের তরফে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস জানিয়েছেন, সিপিএমের তোলা সমস্ত অভিযোগ একেবারে মিথ্যা। তৃণমূলের তরফে কোথাও কাউকে হুমকি বা প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়নি।

বোমা ফেটে জখম পাঁচ শিশু

বল ভেবে বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে বিপত্তি। ওই বোমা ফেটে জখম পাঁচ শিশু। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা ব্লকের ইমামনগর এলাকার ঘটনা। আহতদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ ইমামনগর এলাকার একটি আমবাগানে খেলা করছিল পাঁচ শিশু। সেখানে পড়ে ছিল বলের মতো দেখতে ওই বোমাটি। তাতে লাথি মারে এক জন। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। স্থানীয়েরা পাঁচ শিশুকে উদ্ধার করে বেনিয়াগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। আহত শিশুদের এক জনের আঘাত গুরুতর বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। রহমান শেখ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমবাগানে লুকিয়ে রাখা বোমা কোনও ভাবে শিশুরা দেখতে পেয়েছিল। সেটাকে বল ভেবে খেলতে গিয়েই বিস্ফোরণ ঘটে।’’ স্থানীয়দের একাংশের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের জন্যই ওই বোমা মজুত করা হচ্ছে। খবর পেয়ে ফরাক্কা থানার পুলিশ পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। কে বা কারা আমবাগানে বোমা মজুত করেছিল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

নন্দীগ্রামে তৃণমূলের কার্যালয়ে বিক্ষোভ

শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দলে জেরবার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম। সেখানে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বহু আসনে তৃণমূলের একের বেশি প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছেন। দলের অনুমোদন ছাড়া মনোনয়ন জমা করেছেন, এমন বহু প্রার্থী সোমবার দলীয় কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখালেন। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক পার্টি অফিসে দাউদপুর পঞ্চায়েতের ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল প্রার্থীরা দীর্ঘ ক্ষণ ধর্নায় বসেন। শুধু তাই নয়, তৃণমূল ব্লক সভাপতির সঙ্গে বিতণ্ডাতেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। নন্দীগ্রামে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ জানিয়েছেন, দলে প্রার্থিতালিকা তৈরির সময় অনেক কারণ খতিয়ে দেখা হয়েছে। যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক প্রকল্প ভাল ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে হয়েছে, টিকিট দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যদিও ব্লক সভাপতির এমন যুক্তি মানতে রাজি নন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্ব। বিগত ১০ বছর ধরে নন্দীগ্রামের দাউদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ হাবিবুল। তিনি আবার শেখ সুফিয়ানের আত্মীয়। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁকেও টিকিট দেয়নি তৃণমূল। সুফিয়ান অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি তৃণমূলের সৈনিক হিসেবেই কাজ করে যাবেন। কিন্তু দলীয় পার্টি অফিসে বিক্ষোভ দেখানোর সময় হাবিবুল বলেন, “বুথ থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রার্থিতালিকা তৈরি হয়েছিল। আমরা মনোনয়ন জমা দিয়েছি দলের প্রতীকে। অথচ আমাদের পরিবর্তে একেবারে নতুন প্রার্থীদের বাছাই করেছে দল।’’ এই গোটা ঘটনার নেপথ্যে সুফিয়ানের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। সুফিয়ান অবশ্য সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিজে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই করছেন না। তিনি নির্বাচনের কোনও অংশ নন। কে কোথায়, কী ভাবে কাকে টিকিট দিচ্ছে, তা তাঁর জানার প্রয়োজন নেই। অন্য দিকে, বাপ্পাদিত্য জানিয়েছেন, যাঁরা দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে তৃণমূলের নামে মনোনয়ন দিয়েছেন, তাঁদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে বলা হচ্ছে। তৃণমূলের এই অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, মানুষের কাজের জন্য সময় নেই তৃণমূলের। গোষ্ঠীকোন্দলে জর্জরিত ওই দল।

আরাবুলদের বিরুদ্ধে মামলা

তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম এবং তাঁর পুত্র হাকিমুল-সহ ২০ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হল ভাঙড়ের কাশীপুর থানায়। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে অশান্তির জেরে বার বার উত্তপ্ত হয়েছে ভাঙড়। তৃণমূল এবং আইএসএফের সংঘর্ষে গত ১৫ জুন প্রাণ হারান মহম্মদ মহিউদ্দিন মোল্লা। আইএসএফ নেতৃত্বের দাবি, মহিউদ্দিন তাঁদের কর্মী। মহিউদ্দিনের বাবা কুতুবুদ্দিন মোল্লা রবিবার রাতে কাশীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। আরাবুল, তাঁর পুত্র হাকিমুল ছাড়াও ওই অভিযোগপত্রে আছে তৃণমূল নেতা শরিফুলের নাম রয়েছে। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে খুন, খুনের চেষ্টার মতো একাধিক জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অস্ত্র আইনেও মামলা হয়েছে। ভাঙড়ে অশান্তির ঘটনায় এই নিয়ে মোট সাতটি মামলা রুজু করা হল। এর আগে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ তিনটি মামলা রুজু করেছিল। তৃণমূলের তরফে দু’টি মামলা করা হয়। এ ছাড়া, সংবাদমাধ্যমের অভিযোগের ভিত্তিতে আরও একটি মামলা রুজু করা হয়েছিল। তার পর আইএসএফ কর্মীর খুনের অভিযোগে সপ্তম মামলাটি রুজু হল। আরাবুল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি বা আমার ছেলে এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নই। আমাদেরও দু’জন মারা গিয়েছেন।’’

সভাপতির ছেলে বনাম চেয়ারম্যান

বনগাঁয় একই আসনে তৃণমূল থেকে দুই প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। শেষে এক জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন। পঞ্চায়েত ভোটে বনগাঁর চার নম্বর জেলা পরিষদের আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান শ্যামল রায়। ওই আসনেই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন বাগদার বিধায়ক তথা বনগাঁ তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের ছেলে শুভজিৎ। শেষ পর্যন্ত সোমবার বনগাঁ মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন শ্যামল৷ প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে কোনও রকম মন্তব্য করেননি তিনি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর তিনি জানান, দল যাকে মনোনীত করেছে সে-ই প্রার্থী। ভুল বোঝাবুঝির জেরে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। পরে তুলে নিয়েছেন বলেও জানান শ্যামল। যদিও তাতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা চাপা থাকেনি। তবে শ্যামলের এই পদক্ষেপে ‘খুশি’ বিশ্বজিৎ। তিনি জানান, শ্যামল তাঁর অভিভাবকের মতো। পাশাপাশি ‘বিক্ষুব্দ’দের কড়া বার্তাও দেন তিনি। বনগাঁ উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া যদিও শ্যামলকে ‘মানসিক রোগী’ বলে কটাক্ষ করেন।

বিজেপি প্রার্থীর ভাইকে অপহরণ

মালদহের ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির ২৭ নম্বর আসনের বিজেপির প্রার্থী নিমাই সিংহের ভাই প্রসেনজিৎ সিংহকে অপহরণের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ইংরেজবাজার থানার মহারাজপুর এলাকায় বিজেপি প্রার্থী নিমাইয়ের বাড়ি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি থেকে একটু দূরে স্থানীয়দের সঙ্গে গল্প করছিলেন প্রসেনজিৎ। সেই সময় চার চাকার একটি গাড়ি আসে। কয়েক জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে প্রসেনজিৎকে অপহরণ করেন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্ত শুরু হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই যুবকের খোঁজ মেলেনি।

গুলিবিদ্ধ তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী

আবার উত্তপ্ত কোচবিহারের দিনহাটা। দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর জখম হলেন তৃণমূলের এক প্রার্থীর স্বামী। সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে দিনহাটার গীতালদহ গ্রামে। আহত তৃণমূল কর্মীর স্ত্রী এই ঘটনায় আঙুল তুলেছেন বিজেপির দিকে। বিজেপি যদিও তা মানেনি। স্থানীয় সূত্রে খবর, গুলিতে জখম ব্যক্তির নাম আজিজুল রহমান। তাঁর স্ত্রী ডলি খাতুন এ বার পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন। আজিজুল নিজেও তৃণমূল করেন। সোমবার সন্ধ্যায় দলীয় বৈঠক শেষে করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সেই সময়ই তাঁকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ। একটি গুলি এসে লাগে আজিজুলের পায়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু আহতের শারীরিক পরিস্থিতি দেখে তাঁকে কোচবিহারের সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী নুর আলম হোসেনের দাবি, বিজেপি প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। নির্দল দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। বিজেপির মদতেই এ সব হয়েছে। যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি সুকুমার রায় জানন, তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলেইই এই ঘট‌না ঘটেছে।

আরও পড়ুন
Advertisement