অনন্ত মহারাজ। ফাইল ছবি।
রাজবংশীদের মধ্যে প্রভাবশালী কোচবিহারের নেতা অনন্ত মহারাজকেই রাজ্যসভার প্রার্থী করল বিজেপি। বুধবার বিজেপির তরফে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে এই খবর জানানো হয়েছে। তবে অনন্তকে বিজেপি রাজ্যসভার প্রার্থী করতে চলেছে, তা মঙ্গলবারই জানিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
মঙ্গলবার অনন্তের বাড়িতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। সেই সাক্ষাতের পর অনন্ত নিজেও এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দেন। তিনি রাজ্যসভায় বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন কি না জানতে চাওয়া হলে অনন্ত বলেছিলেন, ‘‘আমার কাছে উনি (কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ) একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। আমি তাতে সম্মতি দিয়েছি।’’ মঙ্গলবার ওই সাক্ষাৎ পর্ব হয়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুধবার দুপুরে নিজেদের রাজ্যসভা প্রার্থী হিসাবে অনন্তের নাম ঘোষণা করে বিজেপি। এ ব্যাপারে বুধবার অনন্ত মহারাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি খুশি। যথাসময়ে মনোনয়নপত্র জমা দেব।’’ তবে সূত্রের খবর, বুধবারই কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অনন্ত। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। তার আগেই কলকাতায় এসে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন তিনি।
আগামী অগস্ট মাসে বাংলা থেকে রাজ্যসভার ছয়টি আসন খালি হচ্ছে। বর্তমানে সেই আসনগুলিতে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজ চলছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। তার ৫টিতে শাসকদল তৃণমূলের জয় নিশ্চিত। ইতিমধ্যেই তৃণমূল তাদের ছ’জন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছে। অন্য দিকে, একটি আসনে জয় নিশ্চিত বিজেপিরও। বুধবার ওই আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিল গেরুয়া শিবিরও। বুধবারের ওই বিবৃতিতে বাংলার অনন্তের নাম ছাড়াও গুজরাতের দু’জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। এঁদের মধ্যে একজন গুজরাতের বাবুভাই জেসংগভাই দেশাই। দ্বিতীয় জনের নাম কেশরীদেব সিংহ জালা।
বিজেপির একাংশ সূত্রের খবর, অনন্তের সঙ্গে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল পদ্মশিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বের। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে দু’বার কথা হয় অনন্তের। তাঁকে রাজ্যসভায় বিজেপির প্রার্থী করার বিষয়টি চূড়ান্ত করেন অমিতই। বিজেপি সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথও প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন অনন্তকেই।
বাংলার রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, অনন্তকে রাজ্যসভায় পাঠিয়ে বাংলার নির্বাচনী রাজনীতিতে দ্বিমুখী কৌশল নিতে চাইছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি বিধানসভা ও ২টি লোকসভায় নির্ণায়ক শক্তি রাজবংশী ভোটারেরা। আর এই ভোটারদের মধ্যে অনন্তের প্রভাব রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করা হলে রাজবংশী সমাজের কাছে বিজেপির দিক থেকে ইতিবাচক বার্তা যাবে। সঙ্গে বাংলা থেকে বিজেপির প্রথম রাজ্যসভার সাংসদ উত্তরবঙ্গ থেকে হলে লোকসভা ভোটে তার রাজনৈতিক সুফল মিলতে পারে।
১৯৮০ সালে বিজেপি গঠনের পর থেকে বাংলা থেকে প্রথম বিজেপি রাজ্যসভার সাংসদ পাবে। সে ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের ভূমিপুত্রকে সংসদের উচ্চকক্ষে পাঠালে উত্তরবঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করছে পদ্মের শীর্ষ নেতৃত্ব। যদিও তৃণমূল মনে করছে, অনন্ত রাজ্যসভার সাংসদ হলে আখেরে তাদেরই লাভ। উত্তরবঙ্গকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার পক্ষে দীর্ঘ দিন ধরে সওয়াল করে আসছেন অনন্ত। তাই বিজেপি যদি সব জেনেও তাঁর রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে প্রস্তাব করায় বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা ভাগের ষড়যন্ত্রে মদত দেওয়ার অভিযোগের আরও একটি প্রমাণ দেখাতে পারবে তৃণমূল।