Anubrata Mondal

প্রায় ন’মাস বন্ধ অনুব্রতের ভোলেবোম চালকল, বন্ধ বেতন, বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় রুজিহারারা

সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে প্রায় ৪৫ বিঘা জমির উপরে তৈরি এই চালকলটি কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে প্রয়াত স্ত্রী ছবি মণ্ডল ও মেয়ে সুকন্যার নামে কেনেন অনুব্রত।

Advertisement
বাসুদেব ঘোষ  
বোলপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৩ ০৭:০৪
খাঁ খাঁ করছে অনুব্রত মণ্ডলের সেই চালকল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

খাঁ খাঁ করছে অনুব্রত মণ্ডলের সেই চালকল। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

প্রায় ন’মাস বন্ধ চালকল। বন্ধ বেতনও। কোনও মতে দিন গুজরান করছেন অনুব্রত মণ্ডলের ‘ভোলেবোম’ চালকলের কর্মচারীরা। সম্প্রতি আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে ভার্চুয়াল শুনানিতে তাই এই চালকলের দু’টি অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার আর্জি জানান বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত। সেখানে চালকলে চুরি ও কর্মচারীদের বেতন না-পাওয়ার কথাও ওঠে। এর পরে ফের চর্চায় উঠে এসেছে ‘ভোলেবোম’ চালকল।

বোলপুরের কালিকাপুরের ‘ভোলেবোম’ চালকলের নাম গরু পাচার মামলার সূত্রেই শিরোনামে থেকেছে। সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে প্রায় ৪৫ বিঘা জমির উপরে তৈরি এই চালকলটি কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে প্রয়াত স্ত্রী ছবি মণ্ডল ও মেয়ে সুকন্যার নামে কেনেন অনুব্রত। আগে এই চালকলটির মালিক ছিলেন হারাধন মণ্ডল। সে সময়ে এর নাম ছিল ‘শ্রীগুরু রাইস মিল’। এই চালকলটি বিক্রি করতে হারাধনের উপরে চাপ তৈরি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রথমে সেখানে দু’টি চালকল থাকলেও পরে দু’টিকে মিলিয়ে একটি করা হয়। চালকলটি সুকন্যাই দেখাশোনা করতেন। এই চালকলে শ’দুয়েক কর্মী-শ্রমিক কাজ করতেন। বেশ ব্যস্ত চালকল ছিল এটি। ‘সুসময়ে’ সারি সারি ধানের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন এলাকার মানুষ।

Advertisement

গরু পাচার মামলায় অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরে ‘ভোলেবোম’ চালকলে বেশ কয়েক বার সিবিআই হানা দেয়। সেখান থেকে বেশ কয়েকটি গাড়ি উদ্ধার হয়। মেলে বেশ কিছু তথ্যও। অভিযোগ, এই চালকলের মাধ্যমে গরু পাচারের টাকা লেনদেন হয়েছে। এর পরেই চালকলটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কাজ হারান শ্রমিকেরা। অভিযোগ, তাঁদের বকেয়া বেতনও মেলেনি। বাধ্য হয়ে তাঁরা বিকল্প পেশা ধরেছেন। এই প্রেক্ষিতেই আদালতে অনুব্রতের অ্যাকাউন্ট খোলার আর্জি বলে মনে করছেন অনেকে।

ওই চালকলে এক সময় ম্যানেজারের পদে ছিলেন বোলপুরে শ্যামবাটির বাসিন্দা সূর্য থাপা। তাঁর কথায়, “এই চালকলে আমি সাত বছর ১০-১২ হাজার টাকার বেতনে কাজ করেছি। আমার উপরেই চালকলের দেখাশোনা থেকে শুরু করে শ্রমিকদের বেতনের ভার ছিল। কিন্তু হঠাৎ চালকল বন্ধ হয়ে যায়। রাতারাতি আমরা সবাই বেকার হয়ে যাই। অনেকেই শেষ কয়েক মাসের বকেয়া বেতন পাননি। আমিও কিছু দিন বাড়িতে বসে থাকার পরে বাধ্য হয়ে নানা কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।” চালকলে কাজ করতেন বোলপুরের বাহিরির বাসিন্দা পলাশ গড়াই। বললেন, ‘‘ওখানে আমিও সাত বছর কাজ করেছি। চালকল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, বাবা-মাকে নিয়ে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছিলাম। কিছু দিন বাড়িতে বসে থাকার পরে অবশেষে গাড়ি চালানোর কাজে ঢুকেছি। কষ্ট করে সংসার চলছে।”

রবিবার চালকলের সামনে গিয়ে দেখা গেল চারিদিক শুনশান। ভিতর থেকে কারও সাড়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, রাতের পাহারাদার ছাড়া এখন আর কারও দেখা মেলে না এখানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement