রথীন ঘোষ এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বাঁ দিক থেকে)
রেশন দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা অধুনা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারির নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছে তৃণমূল। স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে মিছিল করলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। তাঁর দাবি, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বকেয়ার জন্য যে আন্দোলন করছেন, তাতে বিজেপি ভয় পেয়ে গিয়েছে। তাই প্রতিহিংসার বশে তৃণমূলের নেতা এবং মন্ত্রীদের বাড়িতে ইডি এবং সিবিআইকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
শনিবার মধ্যমগ্রাম শহর তৃণমূলের তরফে মিছিল বার করা হয়। তার সামনে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন। বস্তুত, জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে হানা দেওয়ার আগে তাঁর বাড়িতেও গিয়েছে ইডি। টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে খাদ্যমন্ত্রী রথীনকে। তবে সেটা পুরসভা সংক্রান্ত মামলায়। রেশন দুর্নীতি মামলায় জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারি নিয়ে বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘‘এটা বিজেপির চক্রান্ত।’’ মিছিল থেকে রথীন প্রশ্ন তোলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ এবং আবাস যোজনা নিয়ে আমাদের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে আন্দোলন করছিলেন, তার অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য কি এই সব গ্রেফতারি?’’ এর জবাবও তিনি নিজে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি সিবিআই এবং ইডির মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে আমাদের লোকেদের হয়রান এবং হেনস্থা করছে। এর প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি।’’
উল্লেখ্য, বাংলার ‘বকেয়া’র দাবিতে দিল্লি গিয়েছেন অভিষেক। সেখানে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন তাঁরা। পরে কলকাতায় ফিরে রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেন। রাজ্যপালের কথায় সেই ধর্না তুললেও ‘বকেয়া’র দাবিতে জেলায় জেলায় তৃণমূলের আন্দোলন অব্যাহত। রথীনের দাবি, এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি। তাই পাল্টা প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে তারা। যদিও জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারি নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত শেষে কী হয় দেখা যাক। কিন্তু আমাদের বক্তব্য একটাই— এই ইডি-সিবিআই হানা তখনই বাড়ছে, যখন অভিষেক রাজ্যের বকেয়া চেয়ে আন্দোলন করছেন। এর প্রতিবাদে আমরা পথে নামলাম।’’
উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন ধরে মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন রথীন। পুর নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ধৃত অয়ন শীলের সংস্থা এবিএস ইনফোজ়োনের অফিস থেকে বাজেয়াপ্ত করা বিভিন্ন নথিতে সেই রথীনের নাম বার বার উঠে এসেছে বলে দাবি করেছে ইডি। ২০১৪-র পর থেকে পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মেলারও দাবি করেছে তারা। তার ভিত্তিতে রথীনের বাড়িতে অভিযান হয়। যদিও রথীনের দাবি, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই তল্লাশি হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে হেনস্থা করতেই বাড়িতে এসেছিলেন ইডি আধিকারিকেরা।” নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও নথি তাঁর বাড়ি থেকে পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী।