মুখে দিলেই মিলিয়ে যায় সুস্বাদু মণ্ডা। —নিজস্ব চিত্র।
শীতে জমে উঠেছে নলেন গুড়ের মৌতাত। নানা রকমের মিষ্টি এই সময় শরীরে ‘নলেন’ মেখে হয়ে ওঠে মোহময়। এই সময় নলেন গুড়ের ছোঁয়ায় ‘অতুলনীয়’ হয়ে ওঠে বড়া অঞ্চলের খাসমণ্ডা। বাইরে হাল্কা কড়া আর ভিতরে নরম! শীত এলেই ভোজন রসিক বাঙালির বাড়তি পাওনা নলেন গুড়ের মণ্ডা ও রসগোল্লা। আর সেই মণ্ডা-রসগোল্লা যদি আউশগ্রামের বড়া চৌমাথার হয় তা হলে তার স্বাদ একটু আলাদা তো হবেই! মুখে দিলেই মিলিয়ে যায় সুস্বাদু মণ্ডা। আর বার বার মণ্ডার স্বাদ নিতে মন চায় মিষ্টিপ্রিয় বাঙালির। খ্যাতির জন্যই দূর-দূরান্ত থেকে জমে ভিড়।
বর্ধমান-বোলপুর ২বি জাতীয় সড়কের পাশেই আউশগ্রামের বড়া-চৌমাথা এলাকা। কলকাতা থেকে তারাপীঠ কিংবা শান্তিনিকেতন যাওয়ার অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম এই জাতীয় সড়ক। তার পাশেই মিষ্টির ভান্ডার। এক একটি মণ্ডার দাম পড়ে ৫ থেকে ১৫ টাকা। কী ভাবে তৈরি হয় এই ‘খাস’ মণ্ডা? বড়া চৌমাথার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী বিল্টু ঘোষ বলেন, ‘‘প্রথমে ছানার জল ঝরিয়ে স্বল্প পরিমাণ চিনি ও নলেন গুড়ের মিশ্রণে পাক তৈরি করা হয়। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে তীক্ষ্ন নজরে এই পাক তৈরি করতে হয়। তার পর একটু ঠান্ডা হলে তৈরি হওয়া পাককে পাটাতে পেটানো হয়। একে অপরের সঙ্গে যোগ লাগিয়ে তৈরি হয় খাস মণ্ডা।’’ তিনি জানান, এই অঞ্চলের নলেন গুড়ের রসগোল্লাও মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের। অন্যান্য জায়গার তুলনায় বড়া চৌমাথার মণ্ডা ও রসগোল্লা স্বাদে অতুলনীয়।
মণ্ডার জন্ম নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কারও মতে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা গ্রামের ময়রা গোপালচন্দ্র পাল ওই মিষ্টি আবিষ্কার করেন। আবার কারও দাবি, মণ্ডার আবির্ভাব হয় বাঁকুড়ায়। তবে, এ-ও ঠিক এই মণ্ডা অন্য কোনও নামে বা আকৃতিতে হয়তো বাংলার অন্যান্য জায়গায় পাওয়া যায়। তবে বড়া অঞ্চলের মণ্ডা ‘খাস’ কারিগরদের হাতের কারসাজিতেই তৈরি হয়। কারিগর মিতন মণ্ডল ও সনাতন দাসের মতে, মণ্ডার এই স্বাদ পুরোটাই নির্ভর করছে এর পাকের উপর। তাঁদের মতে, ঠিক মতো পাক দিতে না পারলে কমে যায় মণ্ডার মান। তাই সে দিকে তীক্ষ্ন নজর থাকে ময়রাদের।