ছবি: সংগৃহীত।
বিধানসভা ভোটে রাজ্যে শূন্য হয়ে যাওয়ার পরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অগ্নি-বর্ষণের মুখে পড়ল বাংলার সিপিএম! নির্বাচনী কৌশলে ভুল পথে হেঁটেই বাংলায় বামেদের ভরাডুবি হয়েছে, এই অভিযোগে সরব হলেন কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা-সহ একাধিক রাজ্যের নেতারা। ‘মোদী এবং দিদি’কে এক করে দেখাও বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ কি না, সেই চলতি বিতর্কও উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্দরে। বাংলার নেতারা অবশ্য পাল্টা সওয়াল করেছেন, বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্য গড়ে তোলার পক্ষে বিগত পাটি কংগ্রেসে গৃহীত লাইন মেনেই তাঁরা এ রাজ্যে নির্বাচন লড়েছেন। ভোটে সাফল্য না পাওয়ার জন্য কৌশলগত ভুলকেই আলাদা করে দায়ী করা যায় না। বিপর্যয়ের কারণ সবিস্তার ব্যাখ্যা করেছে রাজ্য কমিটি।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের যে বৈঠক শুরু হয়েছে শুক্রবার, তার প্রথম পর্বে রয়েছে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী পর্যালোচনা। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দফতরে বসেই ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশগ্রহণ করছেন এ রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা। প্রথম দিনে কম-বেশি ৩৭ জন বক্তা ছিলেন। দলীয় সূত্রের খবর, নজিরবিহীন সাফল্যের জন্য কেরলের সিপিএম যেমন তারিফ কুড়িয়েছে, তেমনই বেনজির ভরাডুবির জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছেন বঙ্গ সিপিএমের নেতৃত্ব। বামফ্রন্ট তার পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখে বাম ঐক্যের উপরে নির্ভর করে ভোটে লড়লেই ভাল করত বলে মত দিয়েছেন অনেকে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কংগ্রেসের প্রতি ‘দুর্বলতা’ দেখিয়েছেন এবং বাংলায় বিপর্যয়ের দায় তাঁরাও এড়াতে পারেন না— এই কথা বলে নাম না করে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন কেউ কেউ।
বাংলা থেকে নেতারা অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, বিজেপিকে সাঙ্ঘাতিক বিপদ বলে চিহ্নিত করে লড়াই করব আবার কংগ্রেসের থেকেও সমদূরত্ব রাখব— এই লাইন দলে আগেই খারিজ হয়ে গিয়েছে। বাংলাতেও তাঁরা বিজেপি এবং তৃণমূলকে এক করে দেখেননি, তবে দু’দলেরই বিরোধিতা করেছেন। প্রচারে কিছু বক্তব্যে যে বিজেপি ও তৃণমূলকে এক করে দেখা সংক্রান্ত ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়েছিল, তা তাঁরা ইতিমধ্যেই স্বীকার করে নিয়েছেন এবং ভুল সংশোধন করেই দুই শাসক দলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এগোচ্ছেন।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে আগেই সর্বভারতীয় সিপিএমের একাংশের আপত্তি ছিল। যে কারণে ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরাগভাজন হয়েই রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্রেরা। কিন্তু কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তির বৃহত্তর ঐক্যের লাইনে সিলমোহর পড়েছিল ২০১৮ সালে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে। বঙ্গ সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের মত, অন্য রাজ্যের অনেকেই যে সেই লাইন খোলা মনে মেনে নেননি, এ বার বিপর্যয়ের ‘সুযোগে’ এই আক্রমণই তা বুঝিয়ে দিচ্ছে! নির্বাচনী পর্যালোচনা সংক্রান্ত বিতর্ক শেষের পরে আজ, শনিবার থেকে সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের জন্য বেছে নেওয়া হতে পারে কেরলের কান্নুরকে।