নুসরত জাহান। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালিতে ‘১৭৪ ধারা’ আছে বলে বিতর্কে জড়ালেন বসিরহাটের অভিনেত্রী সাংসদ নুসরত জাহান। মঙ্গলবার সন্দেশখালি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এক বৈদ্যুতিন মাধ্যমে এমনটাই বলেছেন তিনি। যা নিয়ে শুরু হয়েছে ঠাট্টা তামাসা। বিনোদন জগৎ থেকে উঠে আসা সাংসদ-অভিনেত্রীর এই মন্তব্যেও হাসির ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’–এর মতোই বিনোদনের উপাদান খুঁজেছেন কেউ কেউ। সমাজমাধ্যমেও ব্যাপক ট্রোলিং শিকার হচ্ছেন টলিউডে়র এই অভিনেত্রী।
নুসরত বলেছেন, ‘‘আমি বেশিদিন ক্যামেরা থেকে লুকিয়ে থাকতে পারি না, কারণ আমি কিছু ভুল করিনি। প্রতি দিন আমি ক্যামেরার মুখোমুখি হচ্ছি, এমন নয় যে আমি এর থেকে দূরে আছি। আমি এই বিষয়ে ইতিমধ্যে আমার মনে কথা বলেছি। আমি সবসময় দলের নির্দেশ মেনে চলি। রাজ্য সরকার প্রতিদিন সাহায্য পাঠাচ্ছে সন্দেশখালির স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে। যা যা দরকার তাই করা হচ্ছে। সাত দিনের মধ্যে লোকটিকে ধরতে বলেছে হাই কোর্ট। রাজ্য সরকার যা যা দরকার তাই করছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’’ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে নুসরত আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না তা নিয়ে দোলাচল রয়েছে। কিন্তু তাঁর এতদিনের লোকসভা কেন্দ্র উত্তপ্ত সন্দেশখালিতে না যাওয়া প্রসঙ্গে এরপরেই তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি না আমার এলাকায় না যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কেন? কিছু পরিস্থিতি এমন রয়ে গিয়েছে। সেখানে ১৭৪ ধারা আছে। আমি সেখানে গেলে সঙ্গে পাঁচ জনকে নিয়ে যাব এবং এটা আইন শৃঙ্খলার বিরোধী হবে। আমি এমন কিছু করব না যা আইন শৃঙ্খলার বিরোধী হয়। মনে রাখবেন আমরা আইন শৃঙ্খলার ওপরে নই। আমাদের প্রশাসনে ওপর আস্থা রাখতে হবে। জনগণ ন্যায়বিচার পাবে।’’
নুসরতের এমন কথা প্রকাশ্যে আসতেই তাঁর বক্তব্য নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। তির্যক মন্তব্য করে তিনি লেখেন, ‘‘এত পড়াশোনা করলাম পিএইচডি করলাম, ‘‘১৪৪ ধারা’’ অব্দি বুঝতে পারলাম... কিন্তু ‘‘১৭৪ ধারা’’টা আজও আমার কাছে অজানাই রয়ে গেল।’’ তবে তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘নুসরত নিশ্চিত জানেন যে কথাটা ১৭৪ নয়, ১৪৪ হবে। হয়তো বলার সময় ভুল বলে ফেলেছেন। এই বিষয়টিকে এত বড় করে দেখা ঠিক হবে না।’’
প্রসঙ্গত, ৫ জানুয়ারি মাসের রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে সন্দেশখালি পৌঁছেছিলেন ইডি আধিকারিকরা। তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের বাড়িতে অভিযানে গিয়ে, তাঁর বাহিনীর হাতে মারধর খেতে হয় ইডি অফিসারদের। তা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল বঙ্গ রাজনীতি। ক্রমে তা আলোড়িত করেছিল জাতীয় রাজনীতিকেও। এরপর একে একে শাহজাহান-সহ তৃণমূলের সব সন্দেশখালির দাপুটে নেতারা বেপাত্তা হতে শুরু করলে জনবিক্ষোভের ঘটনা ঘটতে থাকে গ্রামগুলিতে। মহিলাদের সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে। দীর্ঘ সময় ধরে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে মৌন ছিলেন নুসরত। এমনকি, যখন সন্দেশখালিতে আগুন জ্বলছিল, তখন তিনি ব্যস্ত ছিলেন তাঁর ছবি প্রচার নিয়ে। যা নিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন তৃণমূলের এই তারকা সাংসদ। পরে অবশ্য লিখিত বিবৃতি জারি করে নুসরত বলেছিলেন, “এই সংকটময় পরিস্থতিতে উস্কানি দেওয়া বা অন্যদের উস্কানি দেওয়া থেকে বিরত রেখে ঐক্যবদ্ধ প্রশাসনকে সহযোগিতা করা উচিত। রাজ্য সরকার অক্লান্ত ভাবে স্থানীয়দের সাহায্য করছে এবং এক জন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। আমার কাজ আগুন নেভানো, ইন্ধন জোগানো নয়। আসুন সকলে মিলে প্রশাসনকে সহযোগিতা করি এবং দায়িত্ব পালন করতে দিই।” কিন্তু মঙ্গলবার তাঁর ‘‘১৭৪ ধারা’’ মন্তব্যের পর অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদলও। তবে এখন আর সন্দেশখালির সব গ্রামে ১৪৪ ধারা বলবৎ নেই বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর। দুটি গ্রামের কিছু জায়গায় প্রশাসনিক কাজের জন্যই ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।