তল্লাশি শেষে। বর্ধমানে। —নিজস্ব চিত্র।
অনৈতিক ভাবে টাকা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে বর্ধমান শহরের জিটি রোডের ধারে লস্করদিঘির পূর্ব পাড়ে এক দর্জির বাড়িতে অভিযান চালালেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তিন আধিকারিক। মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাড়ির মালিক মইনুল হাসান মল্লিক ওরফে হাসান আলি ও অন্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা।
সূত্রের খবর, গত ২১ নভেম্বর হাসানের বেসরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ টাকা ঢুকেছিল। চেকের মাধ্যমে সেই টাকা তিনি তুলে এক জনকে দেন। ইডি এ বিষয়ে হাসানের থেকে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে। কে ওই টাকা পাঠিয়েছিলেন, কার কথায় ‘অপরিচিত’ এক জনের হাতে এই বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে দেওয়া হল, এমন নানা প্রশ্ন তাঁকে করা হয়েছে। হাসানের থেকে ইডি আধিকারিকেরা এ-ও জানতে চেয়েছেন, হঠাৎ মোটা অঙ্কের টাকা অনলাইনে পাঠানোর জন্য তাঁর অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছিল কেন। গোয়েন্দা সংস্থার সন্দেহ, লেনদেনের অ্যাকাউন্ট ভাড়া দেওয়া হয়েছিল।
প্রায় ১০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পরে লস্করদিঘির পূর্ব পাড়ে এক চিলতে জমির উপরে হাসানের নির্মীয়মাণ বাড়ি ছাড়েন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, যাওয়ার আগে হাসানকে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন তাঁরা। এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত না দেওয়া হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলে গিয়েছেন তাঁরা।
হাসানের দাবি, “বাড়ি করতে গিয়ে বাজারে ধার হয়ে গিয়েছে। উপার্জনের জন্যে ফের বিদেশে যাব বলে ঠিক করেছি। কয়েক জনকে সে কথা বলে রেখেছিলাম। সেই সূত্রে দক্ষিণেশ্বর-বালি এলাকার এক জনের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিই আমাকে অনলাইনে ১০ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিলেন। আবার তাঁরই লোক এসে সেই টাকা নিয়ে যান। আমি শুধু চেকের মাধ্যমে টাকা তুলে দিয়েছিলাম। যিনি টাকা নিয়েছেন, তিনি আমার অপরিচিত।” হাসানের আরও দাবি, “ওই টাকা পাঠানোর আগে আমি বার বার জানতে চেয়েছিলাম, ‘বিপদে পড়ে যাব না তো’? আমাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যাঁর কথায় টাকা ঢুকল, তিনিই ইডি-কে জানিয়েছেন, টাকার বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। শেষ পর্যন্ত ফেঁসে যেতে হচ্ছে। ১০ লক্ষ টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে ফেরতের ব্যবস্থা করতে বলেছে ইডি।”
জিটি রোডের বাদামতলা মোড় থেকে কয়েক কদম হাঁটলেই সিটি টাওয়ার। তার পিছনেই দিঘিরপাড়ে থাকেন হাসান। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর) প্রকল্প থেকে এক লক্ষ টাকা পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া, বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা ধার করে বাড়ি দাঁড় করিয়েছেন। সেই বাড়িতেই সেলাইয়ের ব্যবসা শুরু করবেন বলে ঠিক করেছিলেন।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসানের স্ত্রী হাতের কাজ ও গৃহশিক্ষকতা করে সংসার চালান। কয়েক বছর আগে সেলাইয়ের কাজে হাসান ১৪ মাস কাতারে ছিলেন। কিন্তু তাতে সংসারের দৈন্যদশা কাটেনি। সেই বাড়িতে ইডি হানা দিয়েছে শুনে সকাল থেকেই কৌতূহলী মানুষ সেখানে ভিড় জমিয়েছিলেন। হাসানের বাড়ির কাছেই রয়েছেএকটি ক্লাব। ক্লাবের কয়েক জন সদস্য বলেন, “চালের গদি থাকায় ভিড় সব সময় থাকে। ইডি হানা দিয়েছে শুনে সকাল থেকে স্থানীয়েরাও ভিড় জমিয়েছেন।” এক চা বিক্রেতার কথায়, “সবে দোকান খুলেছি। কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে তিন জন এসে চালের গদিগুলির দিকে তাকালেন। তার পরে সোজা হাসানের বাড়িতে গিয়ে ডাকলেন। আমার ধারণা, আগেই ওঁরা এসে বাড়ি দেখে গিয়েছিলেন।”