Caffeine Effects on Fertility

যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে কফি! কী ভাবে প্রভাব ফেলে প্রজননে, ব্যাখ্যা করলেন চিকিৎসকেরা

সকাল থেকে রাত, আনন্দে হোক বা ক্লান্তিতে— কফি আছে সবেতেই। আর ঘন ঘন কফি খাওয়ার যে অভ্যাস, তা যে প্রজনন ক্ষমতার উপরেও প্রভাব ফেলে তা জানা আছে কি?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৫৪
High caffeine consumption can impact on Fertility system, says study

যৌনজীবনে কতটা প্রভাব ফেলে ক্যাফিন? ফাইল চিত্র।

অফিসে প্রচুর কাজের চাপ? এক কাপ গরম কফি খেয়ে তরতাজা হয়ে কাজে হাত দিলেন। বন্ধুবান্ধবদের আড্ডায় মুচমুচে স্ন্যাক্স সহযোগে গরম কফির পেয়ালা হাতে উঠলে আড্ডাটা আরও জমজমাট হয়ে ওঠে। সঙ্গীকে নিয়ে সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে কোথাও বসে এক কাপ কোল্ড কফি না খেলে কী আর হয়! অনেকের তো সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতে কফির মগ তুলে না নিলে দিনটাই ভাল যায় না। সকাল থেকে রাত, আনন্দে হোক বা ক্লান্তিতে— কফি আছে সবেতেই। কিন্তু ঘন ঘন কফি খাওয়ার যে অভ্যাস, তা যে প্রজনন ক্ষমতার উপরে প্রভাব ফেলে, তা জানা আছে কি?

Advertisement

দোষটা কফিতে থাকা ‘ক্যাফিন’ নামক উপাদানটির। ক্যাফিনকে বলা হয় ‘স্টিমুল্যান্ট’ যা শক্তিবর্ধক। কেবল কফিতে নয়, চা, অ্যালকোহল, নরম পানীয়, চকোলেট-সহ বেশ কিছু খাবারেও ক্যাফিন থাকে। এই উপাদানটি মস্তিষ্কের কার্যকক্ষমতা বাড়ায়, টাইপ-২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায় ও কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় বলেও দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়। তবে এর ক্ষতিকর দিকটি সম্পর্কে জানা দরকার। ক্যাফিন বেশি পরিমাণে শরীরে ঢুকলে নানা ভাবে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। প্রজনন ক্ষমতার উপরে বড় প্রভাব পড়ে। পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাশয় ও মহিলাদের জরায়ুর উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে ক্যাফিন।

এই বিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মত, “ক্যাফিন যেমন ভাল, তেমনই ক্ষতিকর। এক কাপ কফিতে প্রায় ৭০ থেকে ১৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে। কফি খাওয়ার সময়ে এই পরিমাণটা ভুললে চলবে না। এক কাপ কফিতে কতটা পরিমাণ কফি দিচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করছে সব। সেই হিসাবে দিনে তিন কাপের বেশি কফি না খাওয়াই ভাল। চা-ও তাই। দিনে দুই থেকে তিন কাপ চা খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু তা সাত থেকে আট কাপ ছাড়িয়ে গেলেই বিপদ।”

ক্যাফিন কতটা ক্ষতিকর?

মানুষের শরীরে দু’রকম সিস্টেম আছে— সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক। সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমে অত্যধিক প্রদাহ তৈরি হলে তখন রক্তচাপ বেড়ে যায়, শ্বাসের গতি বাড়ে, নাড়ির গতি বাড়ে, শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। আবার ঠিক উল্টোটা হয় প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের ক্ষেত্রে। ক্যাফিন সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলিকেই সবচেয়ে আগে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এমনটাই বলছেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “রোজ পাঁচ থেকে ছয় কাপ বা তার বেশি কফি খান যাঁরা, তাঁদের শরীরে এত বেশি ক্যাফিন ঢোকে যা সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমকে ‘স্টিমুলেট’ করে। অর্থাৎ, উদ্দীপনা বাড়ায়। এতে শরীরের তাপমাত্রাও বাড়ে, যার প্রভাব পড়ে জনন অঙ্গের উপরে। হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়, শুক্রাশয়ে শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়া ও জরায়ুতে ডিম্বানু তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নষ্ট হতে শুরু করে।”

দিনে ২০০ মিলিগ্রামের মতো ক্যাফিন শরীর সয়ে নিতে পারে। কিন্তু দৈনিক ক্যাফিনের মাত্রা যদি ৩০০ মিলিগ্রাম ছাড়িয়ে যায়, তা হলে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে থাকে। মহিলাদের ইস্ট্রোজেন নামক যৌন হরমোনেরই একটি রূপ এস্ট্রাডিওল হরমোন ও প্রজেস্টেরনের ক্ষরণ এলোমেলো হয়ে যায়। মল্লিনাথ বলেন, ‘‘এই দুই হরমোনের তারতম্য দেখা দিলে মাসিক ঋতুচক্রের প্রক্রিয়াও অনিয়মিত হতে শুরু করে। ফলে ডিম্বাণু নিঃসরণের প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উর্বরতা কমতে শুরু করে।’’

পুরুষদের ক্ষেত্রেও টেস্টোস্টেরন ক্ষরণের প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দিতে পারে অতিরিক্ত ক্যাফিন। এখানে আরও একটি বিষয় আছে। শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে কম থাকে। কারণ শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য শুক্রাশয়ের নিম্ন তাপমাত্রাই জরুরি। কোনও কারণে যদি শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তা হলে দু’রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে— ১) শুক্রাণু উৎপাদনের প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ২) ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্যাফিন যদি বেশি পরিমাণে শরীরে জমা হতে থাকে, তা হলে এই দুই সমস্যাই বড় হয়ে দেখা দেবে। শুক্রাণুর ঘনত্ব ও গুণমানও কমতে থাকবে। এর থেকে বন্ধ্যাত্বের সমস্যাও আসতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ক্যাফিন যৌন উত্তেজনাও কমিয়ে দিতে পারে। এই বিষয়ে ব্রিটেনের ‘দ্য রয়্যাল কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ান অ্যান্ড গাইনেকোলজিস্টস্’-এর একটি গবেষণাপত্র রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা বলেছেন, দিনে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফিন শরীরে গেলে পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই যৌন উত্তেজনা কমতে শুরু করবে। যৌন সম্পর্কের সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্তেজিত না হতে পারার সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। এর অন্যতম বড় কারণই বল ক্যাফিন, যা কেবল কফি থেকে নয় ঘন ঘন চা, মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল, ঠান্ডা পানীয় থেকেও শরীরে ঢুকছে। ক্যাফিন কিন্তু শরীরে আয়রন ও ক্যালশিয়াম শোষণেও বাধা দেয়। যৌন হরমোনের ক্ষরণে বড় ভূমিকা রয়েছে এই দুই খনিজের। কাজেই কফি, চা বা ঠান্ডা পানীয় যা-ই খান না কেন, বুঝেশুনে মেপে খাওয়াই ভাল।

Advertisement
আরও পড়ুন