Sand Mining

Toll Tax: কোথাও দু’কোটি, কোথাও ১৫ লক্ষ, বালি-গাড়ির টোলের বিচিত্র বন্দোবস্ত খণ্ডঘোষের পঞ্চায়েতে

খণ্ডঘোষের লোদনা ও শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ পঞ্চায়েত আইনের ১৩২(ঘ) ধারা অনুযায়ী টোল আদায়কারী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:৩৪
 টোল আদায়ের চুক্তি খণ্ডঘোষের লোদনা পঞ্চায়েতের।

টোল আদায়ের চুক্তি খণ্ডঘোষের লোদনা পঞ্চায়েতের। নিজস্ব চিত্র।

এক আধ টাকার চুক্তি নয়। গ্রাম পঞ্চায়েতকে বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা দেবার শর্তে বালির গাড়ি থেকে টোল আদায়ের বরাত পেয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। এই নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের শশঙ্গা পঞ্চায়েত।

আবার ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটেছে একই ব্লকের লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েত। তারা অনেক কম টাকার চুক্তিতে নির্বাচিত করেছে বালির গাড়ি থেকে টোল আদায়কারী। কেন লোদনা পঞ্চায়েত এত কম টাকার চুক্তিতে বালির গাড়ির টোল আদায়কারী নির্বাচন করল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

প্রতি দিন কয়েকশো বালি বোঝাই ট্রাক যাতাযাত করে খণ্ডঘোষের লোদনা ও শশঙ্গা পঞ্চায়েত এলাকার রাস্তা দিয়ে । ভারী লরি যাতায়াতের জন্য রাস্তার ক্ষতি হলে তা মেরামত করার জন্য পঞ্চায়েতকেই অর্থ ব্যয় করতে হয় । তাই এই দুই পঞ্চায়েত তাঁদের এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী বালি বোঝাই সমস্ত ধরনের গাড়ি থেকে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

সেই মতো খণ্ডঘোষের লোদনা ও শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ পঞ্চায়েত আইনের ১৩২(ঘ) ধারা অনুযায়ী টোল আদায়কারী নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে পঞ্চায়েতগুলি দরপত্র আহ্বান করে । কয়েকমাস আগে স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত চুক্তি করে লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েত একটি সংস্থাকে তাঁদের এলাকার বালির গাড়ি থেকে টোল আদায়ের অনুমতি দেয় । চুক্তি অনুযায়ী ঠিক হয় ওই সংস্থা ৩ বছরের জন্য লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েতকে ১৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকা দেবে।

এর পাঁচ মাস পর শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত তাদের এলাকার রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী বালির লরি থেকে টোল আদায়কারী নির্বাচনের জন্য অনলাইনে নিলাম করে। এক বছরর জন্য ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৫০ হাছার টাকা দেবার শর্তে শশঙ্গা পঞ্চায়েত গত ১৪ ডিসেম্বর টোল আদায়কারী সংস্থাকে নির্বাচিত করেছে।

টোল আদায়কারী নির্বাচনের দরে দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এত বিপুল অর্থের ফারাক কি কারণে হল তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন খণ্ডঘোষের বাসিন্দারা। লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘পর্দার আড়ালে’ টাকার লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা জেলাপরিষদের সদস্য অপার্থিব ইসলাম এবিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন , ‘‘ওটা গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্যাপার। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এর উত্তর দিতে পারবেন।’’

প্রকৃত কত টাকার বিনিময়ে এবং কী শর্তে লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েত বালির গাড়ি থেকে টোল আদারকারী নির্বাচন করেছে তা জানার জন্য প্রধান অঞ্জু সাঁতরা বলেন, ‘‘মনে নেই। চুক্তিপত্র না দেখে বলতে পারব না।’’ তিন বছরের জন্য ১৫ লক্ষ ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে লোদনা পঞ্চায়েত টোল আদায়কারী নির্বাচন করেছে বলে প্রধানকে জানানো হলে তিনি বলেন, “হ্যাঁ।’’

এর পর অঞ্জুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, একই ব্লকের শশঙ্গা পঞ্চায়েত এক বছরের প্রায় ২ কোটি টাকার চুক্তিতে টোল আদায়কারী নির্বান করছে । তা হলে লোদনা পঞ্চায়েত কেন এত কম টাকায় টোল আদায়কারীর সঙ্গে চুক্তি করল? অঞ্জুর সাফ জবাব, ‘‘এত কথার উত্তর দিতে পারব না।’’ উত্তর পাবার জন্য তিনি তাঁর পঞ্চায়েত অফিসে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।

শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রকাশ ঘোষ বলেন, “পঞ্চায়েত অফিসে বসে স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তি করে আমরা টোল আদায়কারী নির্বাচন করার পথে যাইনি। অনলাইনে নিলাম করে টোল আদায়কারী নির্বাচন করেছি। তাতেই সাফল্য এসেছে।’’ ১ বছরের জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা দেবার শর্তে মনোনীত হয়েছেন তাঁদের পঞ্চায়েত এলাকার টোল আদায়কারী । প্রকাশবাবু এ-ও বলেন, এই অর্থে তাঁদের পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

খণ্ডঘোষের বিডিও সত্যজিৎ কুমার বলেন, ‘‘শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) করে। সেই জন্য পঞ্চায়েত এ বার রেকর্ড টাকা পাবে। কিন্তু লোদনা পঞ্চায়েত থেকে আমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগই করেনি। ই-অকশন না করায় পঞ্চায়েত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এই বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।’’

Advertisement
আরও পড়ুন