School Dropouts

স্কুলছুট রুখতে ১৭টি কেন্দ্র, নাচগান-ক্যারাটেও

চন্দ্রশেখরের মতে, শহরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হচ্ছে উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪২
পড়ানোর উদ্যোগ শিক্ষকের।

পড়ানোর উদ্যোগ শিক্ষকের। নিজস্ব চিত্র।

বিনামূল্যের কোচিং স্কুল সতেরোটি, ‘বইটই হইচই’ নামের সেই কোচিংগুলির মোট পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় এগারোশো। চারটি জায়গায় রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের রোজ রাতের খাবারের ব্যবস্থা। আসানসোলের সুবিধা-বঞ্চিত এলাকার ছাত্রছাত্রীদের স্কুলছুট হওয়া রুখতে এমন কর্মকাণ্ড তৈরি করেছেন শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু।

Advertisement

চন্দ্রশেখরের মতে, শহরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হচ্ছে উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা। বাকিরা যাচ্ছে সরকারি স্কুলে। কিন্তু, গ্রামে ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুল নেই। গ্রামের সরকারি স্কুলে উচ্চ, মধ্য-নিম্নবিত্ত পরিবারের সবাই একসঙ্গে পড়াশোনা করে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা নিজেদের বাচ্চাদের নিজেরাই পড়ায় অথবা গৃহশিক্ষক রাখে, তাতে তারা অনেক এগিয়ে যায়। কিন্তু, নিম্নবিত্ত, নিরক্ষর দিনমজুরের বহু ছেলেমেয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে পড়াশোনার পরিবেশ পায় না। তাই স্কুলে গিয়ে অনেক সময় পড়া পারে না। ধীরে ধীরে ভয় পেয়ে স্কুল যাওয়াই বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলছুট কমাতে ২০১৮ সালে পাড়ায় পাড়ায় কোচিং স্কুল শুরু হয়। প্রথমে তিনটি থাকলেও করোনার লকডাউনে এই সমস্যা আরও বাড়ে। এখন সতেরোটি কোচিংয়ে এগারোশো বাচ্চা পড়াশোনা করছে।’’ তিনি জানান, ক্লাসের পরিকাঠামো ও শিক্ষক, শিক্ষিকাদের বেতনের দায়িত্ব নিয়েছেন সতেরো জন দাতা।

আসানসোলের বনসরাকডিহিতে এমন কোচিংয়ে গিয়ে দেখা গেল, পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়াতে ছাত্র ছাত্রীদের শেখানো হচ্ছে রোবট বানানো ও ‘হোম অটোমেশন’-এর কাজ। রয়েছে স্মার্ট ক্লাসরুম। শিক্ষনীয় ভিডিয়ো চালিয়ে চলছে পড়াশোনা। নাচ, গানের সঙ্গে মেয়েদের শেখানো হচ্ছে ক্যারাটেও। ক্যারাটে দলের নাম মাতঙ্গিনী বাহিনি। বাহিনিতে আছে একচল্লিশ জন মেয়ে। এ ছাড়া আছে আদিবাসী মেয়েদের দুটি ফুটবল দল বেঙ্গল টাইগ্রেস। রয়েছে প্রায় পনেরোশো বইয়ের লাইব্রেরিও। অভিভাবক সবিতা হেমব্রম বলেন, ‘‘শুধু আমাদের বাচ্চারা নয়, আমরাও এখানে এসে পড়ি।’’ মায়েদের জন্যও আসানসোলের বনসরাকডিহি ও কাটাগড়িয়ায় নিয়মিত ক্লাস হয়। দুটি স্কুলে পড়েন বাষট্টি জন মা।

স্থানীয় বাসিন্দা জবা হাঁসদা মনে করেন, এই কোচিং স্কুল চালু হওয়ার পরে বাচ্চাদের মধ্যে উৎসাহ এসেছে। স্কুলছুট প্রায় নেই বললেই চলে। স্থানীয় কন্যাপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুরজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘স্কুলছুট বন্ধে সারা দেশের কাছে মডেল হওয়া উচিত চন্দ্রশেখরবাবুর বইটই হইচই স্কুল।’’

আট বছর ধরে আসানসোলের কাছের ও পুরুলিয়ার গ্রামে অপুষ্টি নিয়ে কাজ করেছেন ‘ফুডম্যান’ নামে পরিচিত এই শিক্ষক। সাড়ে চার লক্ষ প্লেট খাবার বাঁচিয়ে তা তুলে দিয়েছেন সুবিধা-বঞ্চিত শিশুদের মুখে। আদিবাসী গ্রামে তাদের ভাষায় অপুষ্টি রোধে সচেতনতা কর্মসূচিও করেছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন