দু’হাতের দুর্গা
R G Kar Hospital Incident

‘আর নয়’, পথে নেমে দৃপ্ত মোনালিসা

বর্ধমানের ভাতছালার পিওন পাড়ার মোনালিসা মিত্রের বয়স ৩৯। ছোট থেকে আগলে বড় করেছেন বাবা-মা। বন্ধু থাকলেও ঘোরাফেরা তেমন ছিল না।

Advertisement
সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:৪১
মাঝে পোস্টার হাতে মোনালিসা মিত্র।

মাঝে পোস্টার হাতে মোনালিসা মিত্র। নিজস্ব চিত্র।

শ্বশুরবাড়ি, বাপেরবাড়ি দু’টোই একই শহরে। সংসার, ছেলেকে বড় করে তোলার দায়িত্বের মধ্যে দেশ, রাজ্য, শহরের নানা ঘটনায় বিচলিত হয়েছেন তিনি। তবে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ থেকেছে। দেওয়াল টপকে রাস্তায় পৌঁছয়নি প্রতিবাদ। তবে এ বার ‘রাত দখল’, ‘ভোর দখলের’ জমায়েতে, মিছিলে জোর গলায় আওয়াজ তুলেছেন তিনি। মেয়েদের সংগঠিত করে আন্দোলন করে চলেছেন। লড়ছেন অধিকারের লড়াই।

Advertisement

বর্ধমানের ভাতছালার পিওন পাড়ার মোনালিসা মিত্রের বয়স ৩৯। ছোট থেকে আগলে বড় করেছেন বাবা-মা। বন্ধু থাকলেও ঘোরাফেরা তেমন ছিল না। খানিক ঘরকুনো ছিলেন। দুর্নীতি-দুষ্কর্মে মন অশান্ত হলেও রাজনৈতিক ভাবে কোনও কিছুর প্রতিবাদ তো দূর, সামাজিক ভাবে কারও বিপক্ষে স্বর তোলেননি কখনও। শ্বশুরবাড়ি অবশ্য রাজনৈতিক পরিবার। তবে গত ১৮ বছর সেখানেও রাজনীতির ছায়া মাড়াননি তিনি। মোনালিসার কথায়, ‘‘চেনা আমিটাকে এক ঝটকায় বদলে দিয়ে গেল আরজি করের চিকিৎসক তরুণী। প্রতিবাদ, পথে নামা সবটাই ভিতর থেকে হচ্ছে। মনে হচ্ছে শুধু ওই তরুণীর বিচার নয়, এমন ঘটনা যাতে কেউ না ঘটানোর সাহস পায়, সেই ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে।’’

বর্তমানে ‘মানবী-অর্ধেক আকাশ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তিনি। তাঁর উদ্যোগ, উৎসাহ দেখে অবাক হচ্ছেন অনেকেই। মহালয়ার ভোরে কার্জন গেটের কর্মসূচিতে অন্যতম ভূমিকা নেন তিনি। মোনালিসা বলেন, ‘‘একজন ডাক্তারের যদি কলকাতার মতো শহরের বড় হাসপাতালে সুরক্ষিত না থাকেন, তাহলে গ্রাম বাংলায় যাঁরা কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন তাঁরা কতটা সুরক্ষা পাচ্ছেন, বোঝাই যাচ্ছে। এর প্রতিবাদ না করলে ছেলেমেয়েদের কী শিক্ষা দেব? শুধু পড়াশোনায় এগিয়ে যা আর অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে নে—পরোক্ষে তো এটাই বলা হবে।”

মেমারি কলেজের শিক্ষিকা জয়তী ভট্টাচার্যও রয়েছেন এই আন্দোলনে। তিনি বলেন, “আরজি কর নিয়ে আন্দোলনে রাস্তায় নেমে মোনালিসা যে ভাবে স্লোগান দিচ্ছে, কাজ করছে বোঝাই যাচ্ছে না যে ও নতুন।’’

প্রতিবাদ স্বতঃস্ফূর্ত হলে তা গণ-আন্দোলনের চেহারা নিতে সময় লাগে না। আরজি করের ঘটনা শুধু চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নয়, সরকারি হাসপাতালে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী, রোগীদেরও নিরাপত্তার দাবি। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের জুড়ে যাওয়ার মানে প্রত্যেক মেয়ের পথেঘাটে স্বাভাবিক ভাবে, ভয়হীন ভাবে চলার অধিকারের দাবি। মোনালিসা বলেন, ‘‘এই ঘটনায় দোষীদের এমন শাস্তি দিতে হবে, যে বাকি অসুরেরাও যেন অন্যায় করার আগে দু’বার ভাবে। পাড়ায় পাড়ায় দুর্গারা থাকবে, যাতে কেউ কুনজরে দেখার সাহসও না করতে পারে। শিক্ষিত সমাজের মধ্যে চেতনা না এলে নুইয়ে পড়া সমাজের শিরদাঁড়া সোজা হবে না। ’’লড়াইয়ে আছেন মোনালিসার মা স্বপ্না মিত্র। তিনি বলেন, “মেয়ের দেখানো পথে রাত দখলের অভিযানে নেমেছিলাম। এই রকম একটা ঘটনার নিন্দা জানাতে পথে তো নামতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement